সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সিলেট টেস্টের মূল চ্যালেঞ্জ আজ

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৫

বাংলাদেশ দলের ব্যাটার ও বোলাররা সিলেট টেস্টের প্রথম দিনে আক্ষরিক অর্থে কিছুই করতে পারেননি। সেই চাপ খানিকটা বেশি পড়েছিল তরুণ গতিদানব নাহিদ রানার ওপরে। সিলেট টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের এই পেসারকে নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। আগের টেস্ট সিরিজগুলোতে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এমনকি ভারতের ব্যাটারদের কাঁপুনি ধরিয়েছিলেন তিনি। জিম্বাবুয়ে তাকে নিয়ে ভাবছে না বলে জানিয়েছিল। তাতে সিলেটে কিছুটা চ্যালেঞ্জের সঙ্গে বাড়তি প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছিল। ম্যাচের প্রথম দিনে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও দ্বিতীয় দিনে দেখিয়েছেন আগ্রাসন।

গতকাল জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনারকে শুরুতেই সাজঘরে পাঠিয়েছেন নাহিদ। মোট ৩ উইকেট শিকার করেছেন। তার দেখানো পথ ধরে হেঁটে মেহেদী হাসান মিরাজ পেয়েছেন ৫ উইকেট। তবে সেসব ছাপিয়ে এই টেস্টের ভাগ্য ঝুলে আছে আজ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ওপরে।

প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও শুরু হয়েছিল বৃষ্টির সম্ভাবনাকে মাথায় নিয়ে। যদিও দিনের শুরুতে বৃষ্টি হয়েছে, তবে সেটি খেলায় বড় প্রভাব রাখেনি। দিনের আলোর পাশাপাশি ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে খেলা চালাতে হয়েছে। আগের দিনে শুরু করা ওভার এদিন শেষ করেন নাহিদ। নো বল করে একটি অতিরিক্ত রানও দেন তিনি। তবে নিজের পরের ওভারেই স্বরূপে ফেরেন এই পেসার। পরপর কিছু ডট বল আদায় করে তুলে নেন বেন কারানের উইকেট। 

খানিক বাদে আরেক ওপেনার ব্রায়ান বেনেটের উইকেটও তিনি তুলে নেন, যদিও তার আগে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন বেনেট। প্রথম দিনে বাংলাদেশের ১৯১ রানের পিঠে এই দুই ওপেনার ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই তাদের ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন নাহিদ রানা।

নাহিদ রানার পাশাপাশি জ্বলে ওঠেন হাসান মাহমুদ। নিকোলাস ওয়েলচকে দুর্দান্ত এক ইনসুইং ডেলিভারিতে পরাস্ত করেছেন হাসান। পঞ্চম স্ট্যাম্প বরাবর বল করে সেটিকে ভেতরে প্রবেশ করিয়েছেন, উড়িয়ে দিয়েছেন অফ স্ট্যাম্প। বলটি এতই নিখুঁত ছিল যে, ওয়েলচ কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্ট্যাম্প উড়ে গিয়েছে। এই দুই পেসারের পাশাপাশি সৈয়দ খালেদ আহমেদও মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন বোলিংয়ে। বেশ কয়েকটি ক্যাচের সম্ভাবনাও তিনি তৈরি করেছিলেন, কিন্তু সেগুলো কিছুটা কঠিন হওয়ায় উইকেট তুলে নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

এমন পরিস্থিতিতে আবারও সফল হন নাহিদ। এবার তার শিকার জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। আরভিনের ব্যাট ছুঁয়ে বল উইকেটরক্ষক জাকের আলী অনিকের হাতে ধরা পড়ে। ইংলিশ আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো প্রথমে আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরান নাজমুল হোসেন শান্তরা।

এ দিন লাক্কাতুরায় খেলার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনের আলোর প্রখরতাও বেড়েছে। প্রথম দিনে মধ্যাহ্ন বিরতিতে বৃষ্টি হয়েছিল, তারপরে আকাশ পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ার পরে কিছুটা সময় নিয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়। মধ্যাহ্ন বিরতির পরে জিম্বাবুয়ের লোয়ার অর্ডারের ব্যাটাররা দ্রুত কিছু রান তোলেন। তাতে দলটির লিড দাঁড়ায় ৮২ রানে। নাহলে আরো কম হতে পারত এই রান। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে ২৫ রানে। 

গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৩ রানের মাথায় নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও দিয়েছিলেন একাধিক সুযোগ। কিন্তু জিম্বাবুয়ের ফিল্ডাররা সেগুলো তালুবন্দি করতে পারেননি। আজ সাদমান ও মুমিনুল হকের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশের ব্যাটাররা এই ইনিংস যত লম্বা করতে পারবেন, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে ততই সহজ হবে। নাহলে আজই নির্ধারণ হয়ে যেতে পারে এই টেস্টের ভবিষ্যৎ।

এ দিকে জিম্বাবুয়ে দলে দীর্ঘদিন পরে জায়গা করে নিয়েছেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। ২০১৮ সালে সিলেটেই তার টেস্ট অভিষেক হয়েছিল। এরপরে দীর্ঘ পাঁচ বছর সাদা পোশাকে তাকে দেখা যায়নি। ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলেছিলেন। তারপরে আবারও বাদ পড়েন বাঁহাতি এই স্পিনার। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে তাকে দলে রাখা হয়েছে। সিলেটে সাড়ে ৬ বছর পরে খেলতে নেমে বল হাতে সফল হয়েছেন তিনি। মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম ও তাইজুল ইসলামকে আউট করেছেন। 

দ্বিতীয় দিনের শুরুতে জানিয়েছেন, ‘উইকেট দেখে আমরা ভেবেছিলাম পেসাররা সুবিধা আদায় করে নিতে পারবেন। বাস্তবে সেটিই হয়েছে। এরপরে আমরা স্পিন দিয়েও দুই-একটা উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাতে আমরা সফলও হয়েছি।'

সিলেটে খেলার বিষয়ে ওয়েলিংটন বলেছেন, 'বাংলাদেশে আমার টেস্ট অভিষেক হয়েছিল। এবার যে প্রান্ত থেকে বল করেছি সেই প্রান্ত থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে আমার প্রথম ওভারটি করেছিলাম। আবার খেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। গেল কয়েক বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলিনি। এরপরে এই টেস্টের প্রথম দিনে যা করতে পেরেছি তা দুর্দান্ত ছিল। বাংলাদেশকে এখন দ্বিতীয় বাড়ির মতো মনে হচ্ছে, বিশেষ করে একজন স্পিনার হিসেবে। এখানে একজন স্পিনারের জন্য আদর্শ কন্ডিশন রয়েছে।’

ইত্তেফাক/এনএন