শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

‘কিংস নিজেরাই সুনাম নষ্ট করছে’ 

আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ১২:৩৫

শুক্রবার সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কিংসের মাঠে প্রিমিয়ার লিগের খেলায় আবাহনী-বসুন্ধরা ম্যাচের পর যা হয়ে গেছে, তা ফুটবল অঙ্গনে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ মুখে বলছেন, কেউ বলতে চাইলেও চুপ করে আছেন। কিংসের মাঠে খেলার পর আবাহনী বেরিয়ে যাওয়ার সময় কিংসের টেন্ট থেকে দুজন তরুণের আক্রমণ ঘটনার সূত্রপাত ঘটায় বলে আবাহনীর দাবি। এর মধ্যে কিংসের দুই-চার জন খেলোয়াড় কোচিং স্টাফ যেভাবে আক্রমণ করতে গেছেন, তা ফুটবল খেলার মাঠে শোভা পায় না। বিশেষ করে কিংসের ডাগআউট থেকে বাইরের লোকজন মাঠে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলো। 

আবাহনী এই মাঠে খেলাটা নিরাপদ মনে করছে না। তাদের খেলোয়াড়দেরও ওপর যেভাবে ভিআইপি গ্যালারি থেকে আক্রমণ করা হয়েছে, তা দেখে আবাহনী মনে করছে তারা অনিরাপদ। ফুটবল ম্যানেজার সত্যজিত দাস রূপু বললেন, 'কী ঘটেছে সেটা সবাই দেখেছে। আপনাদের চোখ-কান খোলা ছিল, আপনারা দেখেছেন।' রূপুর কাছে বিস্ময়কর লাগছে স্টাফরা কীভাবে মারামারি করতে যায়। শুক্রবার কিংসের ফুটবলার সাদ উদ্দিন ম্যাচ কমিশনারকে ধাক্কা দিতেও পিছ পা হননি। 

কিংসের মাঠে নিরাপত্তার বিষয়ে মোহামেডান বার বার প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছিল। বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে তাদের মাঠে যখনই মোহামেডান খেলতে গিয়েছে, কিছু না কিছু ঘটেছে। মোহামেডান দুই দফায় চিঠি দিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল, তারা খেলতে যেতে চায় না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়তি পুলিশ এনে খেলা চলাতে হয়েছিল। শুধু ক্লাব ফুটবল নয়, বসুন্ধরা কিংসের মাঠে বাংলাদেশ জাতীয় দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে। সেখানেও উচ্ছৃঙ্খল দর্শকের কারণে ২০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে বাফুফেকে। এএফসি থেকে সতর্ক করা হয়েছে। 

শুক্রবারের ঘটনা দেখেছেন মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ। তিনি অবাক হননি। যে কোনো মুহূর্তে এমন কিছু ঘটবে, তা নাকি তার জানাই ছিল। বসুন্ধরা কিংস ভালো ভালো ফুটবলার নিয়ে দল গড়ে, বিদেশি কোচ এনে বড় বাজেটের দল গঠন করেও কিছু কিছু কারণে নিজেরাই সুনাম নষ্ট করছে বসুন্ধরা কিংস। অর্জিত সুনাম ধরে রাখতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ। তিনি বলেন, 'বসুন্ধরা কিংসকে এটা মানায় না।' আলফাজের দুঃখটা হচ্ছে, যারা চ্যাম্পিয়ন হয় তাদের খেলোয়াড় আঘাত করতে চাইবেই। মাঠে রেফারি আছে। 

আলফাজ বলেন, 'ওদের স্টেডিয়ামে খেলা হলে শক্তিটা আরও বেড়ে যায়। যেসব আচরণ আছে সেগুলো বেশি আকারে বেড়ে যায়। দর্শককে দিয়ে গোলকিপারেরে পেছনে ডিস্টার্ব করা, ঢিল মারা, গালাগালি করানো, গোল না পেলে স্মোক ছাড়ানোটা স্পোর্টিং না। স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা বিষয়টা নিশ্চিত করতে হয়। বসুন্ধরা কিংসের স্টেডিয়ামে দর্শক সবকিছু নিয়ে ঢুকতে পারে। কেন?' আলফাজ বলেন, অকথ্য ভাষায় গালাগালি করা হয়। ইট বোতল ছুড়ে মারা হয়। এসবের কারণে অনেক ম্যাচ এক্সট্রা ১০ মিনিট, ১৫ মিনিটও খেলা হচ্ছে। 

কিংসের নামের সঙ্গে খেলোয়াড়রা মানিয়ে নিতে পারছেন না। কথায় কথায় মাঠে ঢুকে পড়তে দেখা যায়। বিদেশি কোচ ডাগআউটে দাঁড়িয়ে থাকলেও রেফারির সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে বেঞ্চের কিছু ফুটবলার মাঠে ঢুকে যান, কোচিং স্টাফও রয়েছেন তারা মাঠে ঢুকে যান। মাহবুব হোসেন রক্সিকে প্রায়ই মাঠে ঢুকে যেতে দেখা যায়। প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বিশ্রী ইঙ্গিত করছেন। ডাগ আউটে রক্সির অঙ্গভঙ্গি দেখে প্রশ্ন জাগে তিনি কোথায় আছেন। এটা কি খেলার মাঠ, না অন্য কিছু। একবার মোহামেডানে খেলেছেন। 

একদিন সন্ধ্যায় লিগের খেলা শেষে খেলোয়াড় বহনকারী মোহামেডানের বাস ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে ইসলামিয়া হোটেলের কাছে উত্তেজিত দর্শক দাঁড়িয়ে ছিলেন। মোহামেডানের জার্সি পরা ফুটবলার রক্সি বাস থেকে নেমে দর্শককে মারতে দৌড়ে গিয়েছিলেন। মনে হচ্ছে সেই উগ্রতা এখনো রক্তে বহন করছেন রক্সি। বসুন্ধরা কিংসের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে রক্সির উগ্রতা আরও বেড়েছে। 

ইত্তেফাক/জেডএইচ