রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

এলাকাবাসীর ক্ষোভ

ডিইপিজেডের আশপাশের এলাকায় তীব্র লোডশেডিং

আপডেট : ০৫ মে ২০২৫, ০৩:৩৪

ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ডিইপিজেড)-এ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে ঐ এলাকার আশপাশে তীব্র লোডশেডিং চলছে। ঐ এলাকার বাসাবাড়িসহ ছোটবড় কারখানাগুলোতে বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকছে। গরমের মধ্যে লোডশেডিং লম্বা হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি ঘরে থাকতেও পারছেন না। ইপিজেডে অবস্থিত কারখানাগুলো নিয়মিত বিদ্যুৎ পেলেও বাইরের স্থানীয় কারখানাগুলোতে উৎপাদনে ধস নেমেছে। এ অবস্থা নিরসনে সরকারের ওপরের মহলের সহায়তা চেয়েছেন স্থানীয়রা।

এলাকার সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নলাম গ্রামের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, দিনে ও রাতে একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যায়, যার ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, শ্রীপুর বলিভদ্র, বাদাইল ও তালপট্টি গ্রামে বিদ্যুৎ প্রায় থাকেই না, মাঝে মাঝে আসে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শনিবার সারা দিন বিদ্যুৎ ছিল না, রাত ১২টার পর এসেছিল। গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় পানিও উঠানো যায় না।’ এতে তাদের দৈনন্দিন কাজ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

আশুলিয়ার বাইদগাঁও এলাকার স্কুলশিক্ষক সামিদুর রহমান বলেন, এলাকায় ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে। দিনে-রাতে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার খেলায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। ধামসোনা ইউনিয়নের সুবন্দি গ্রামের হযরত আলী বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামে অনেক বেশি লোডশেডিং হয়। বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। শিমুলিয়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া বাজারের মুদি দোকানদার সোহরাব বলেন, নিয়মিত বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের সীমাহীন কষ্ট করতে হচ্ছে। ব্যবসা পরিচালনা করতেও অনেক সমস্যা হচ্ছে। গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দা ফজলুল হক জানান, বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়ার কারণে শুধু ভোগান্তি নয়, আমাদের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় গভীর রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে চোর-ডাকাতের আতঙ্কে থাকি আমরা।

উল্লেখ্য, ঢাকা ইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করত ইউনাইটেড পাওয়ার। গত ২৮ এপ্রিল ঐ বিদ্যুৎলেন্দ্রের গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস গ্যাস। এতে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন। ফলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় ইপিজেডের কারখানাগুলোর। ঐ দিন রাতেই দ্রুত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর সহায়তা নিয়ে ইপিজেডের অভ্যন্তরীণ সড়ক বাতিগুলো জ্বালানো হয়।

উল্লেখ্য, ঢাকা ইপিজেডে মোট ১১৫টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৮টি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন এবং  প্রায় ১ লাখ কর্মীর জীবন-জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দৈনিক প্রায় সোয়া ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য উৎপাদন হুমকিতে থাকায় বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিবেশ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ঢাকা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্যাসের বিল-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের জটিলতা দীর্ঘদিনের। বকেয়ার কারণে গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করতে পারে তিতাস। তবে তার আগে অন্তত একটা নোটিস দেওয়া উচিত ছিল। তাতে হয়তো বিকল্প উপায়ে বিদ্যুতের সংস্থান করা যেত।

ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ডিইপিজেড)-এ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক (কারিগরি) মো. মামুনুর রশিদ ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, বর্তমানে আশুলিয়া ও  কালিয়াকৈর এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৪৫০ মেগাওয়াট হলেও জাতীয় গ্রিডে সংস্কার কাজ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে অনেক সময় তা পূরণ করা সম্ভব হয় না।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক জানান, ডিইপিজেডের জন্য বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে ৩৫ থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে করে সাধারণ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি পড়বে না বলে আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে, ডিইপিজেড সংলগ্ন গার্মেন্টস কারখানাগুলো যেগুলো ইউনাইটেড পাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেত, তারা এখন বিদ্যুৎ না পেয়ে মূল্যবান জ্বালানি দিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হাজি মো. গফুর মিয়া। এতে করে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

ইত্তেফাক/এমএএম