রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

বন্ধ ট্রেনগুলি চালু করিবার উদ্যোগ লওয়া হউক

আপডেট : ০৬ মে ২০২৫, ০৩:৩০

ট্রেন একটি জনপ্রিয় এবং তুলনামূলক আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী যাতায়াত বাহন। জনবহুল দেশে রেলপথের উন্নয়ন সাধারণ গণপরিবহন ব্যবস্থাকে কার্যকর ও ফলপ্রসূ করিবার প্রধানতম উপায়। রাজধানী ঢাকা শহরে মেট্রোরেলের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে যে, এই দেশের সাধারণ মানুষের যোগাযোগ সমস্যার সমাধান করিতে হইলে রেলপথকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হইবে। তবে শুধু শহর-নগরের কথা ভাবিলেই চলিবে না, সমগ্র দেশের তৃণমূল এলাকার জনগণের কথাও ভাবিতে হইবে। ইতিমধ্যে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ রেলসুবিধা সম্প্রসারণের দাবি তুলিতেছেন। তাই রেল-সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন বলিয়া আমরা মনে করি।

গতকাল ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- 'ইঞ্জিন-সংকটে ৭০টি ট্রেন বন্ধ'। এমন শিরোনামের খবর প্রকাশিত হওয়ার অর্থ হইল রেলপথের উন্নয়নে আমাদের উদাসীনতা রহিয়াছে। রেলপথের লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন ও কোচ এবং জনবল ঘাটতির কথা বহুদিন ধরিয়া বলা হইতেছে। ইহার পূর্বে এই ব্যাপারে সরকারের প্রতি আমরা একাধিক বার দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছি; কিন্তু এই সমস্যার কার্যকর সমাধান এখনো পরিলক্ষিত হইতেছে না। এই ক্ষেত্রে যে স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন সেই কথা বলাই বাহুল্য। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সমগ্র দেশে স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বে ইঞ্জিন ও কোচ-সংকটের কারণে যে ৭০টি ট্রেন বন্ধ রহিয়াছে, তাহার মধ্যে ৩৩টি কমিউটার ট্রেন, ২১টি লোকাল, ১০টি মিশ্র, চারটি মেইল ও দুইটি শাটল ট্রেন। করোনা মহামারির সময় সমগ্র দেশে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হইয়া যায়। কিছু ট্রেন চালু হইলেও অনেক ট্রেন এখনো চালু হয় নাই। যেই সকল এলাকায় এইভাবে বিভিন্ন ট্রেন বন্ধ রহিয়াছে, সেইখানে জনগণের ক্ষোভ ও অসন্তোষ ক্রমেই বাড়িতেছে।

রেলওয়ের মহাপরিচালক বলিয়াছেন যে, তাহারা ইঞ্জিন সংগ্রহের জন্য কাজ করিয়া যাইতেছেন। তাহার মতে, মিটার গেজ ও ব্রড গেজ মিলাইয়া সমগ্র দেশে এখন আরো ৯০টির মতো ইঞ্জিন প্রয়োজন। ইতিমধ্যে এডিবির অর্থায়নে প্রথম ধাপে মিটার গেজের জন্য ৩০টি ইঞ্জিন ক্রয় করিবার প্রকল্প গ্রহণ করা হইয়াছে। বন্ধ হইয়া যাওয়া ট্রেনগুলি পুনরায় চালু করিতে হইলে সর্বাগ্রে নূতন ইঞ্জিন ক্রয় করা আবশ্যক। জানা মতে, সমগ্র দেশে বর্তমানে ২৭৫টি ট্রেন চালু রহিয়াছে। ইহার মধ্যে ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে-পূর্বাঞ্চলে ৫৮টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৬২টি। কমিউটার ও মেইল ট্রেন চলাচল করে ১২৮টি। ইহা ছাড়া সমগ্র দেশে আটটি কনটেইনার ও ১৯টি গুডস ট্রেন চলাচল করে। রেলবহরে মোট ইঞ্জিনের সংখ্যা ২৯৭টি। তাহার মধ্যে ৫১ শতাংশের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পার হইয়া গিয়াছে। কোনো কোনো ইঞ্জিনের বয়স ৪০ বৎসর অতিক্রম করিয়াছে। এইভাবে জোড়াতালি দিয়া কি সঠিকভাবে রেল পরিচালনা করা যায়?

আজ সর্বত্র সংস্কারের রব উঠিয়াছে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হইতেছে রেলওয়ের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সংস্কার জরুরি। শুধু লোকোমোটিভ ও জনবল বাড়াইলেই চলিবে না, জরাজীর্ণ রেলপথ সংস্কারেও উদ্যোগ লইতে হইবে। বিভিন্ন উন্নত দেশও এখন রেলপথকে গুরুত্ব প্রদান করিতেছে। চীনে রেলপথের ব্যাপক উন্নয়ন হইয়াছে। আমাদের দেশেও ক্রমান্বয়ে বুলেট ট্রেন বা দ্রুতগতির রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা কেন চালু হইবে না, সেই প্রশ্ন তুলিতেছে সাধারণ মানুষ। সমগ্র দেশে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করিতে হইবে। এক মাথা হইতে অন্য মাথা বা এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্তে যাহাতে সহজেই রেলভ্রমণ করা যায় তাহার সুব্যবস্থা করিতে হইবে। ইতিমধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার রেল চালু করায় আমাদের পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা বাড়িয়া গিয়াছে। এইভাবে সমগ্র দেশে রেলযোগাযোগের ব্যাপক উন্নয়ন করা হইলে তাহার সুফল মানুষ সহজেই ভোগ করিতে পারিবে। এই জন্য সার্বিকভাবে আধুনিক রেল ব্যবস্থাপনার উন্নয়নও ত্বরান্বিত করিতে হইবে।

ইত্তেফাক/এমএএম