রাজধানীর কলাবাগানে মিনি চিড়িয়াখানা থেকে লুট হওয়া পাখি এখনও উদ্ধার হয়নি। পাখি লুটের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কলাবাগান থানায় কেউ কোনো মামলা বা অভিযোগ করেনি। সোনারগাঁও রোডে (ইস্টার্ন প্লাজার পেছনে) গভীর রাতে একটি বাড়িতে ঢুকে ‘মব’ সৃষ্টি করে ৪০ লাখ টাকা দামের ২০ প্রজাতির বিদেশি পাখি লুট হয়। এ ঘটনার পর কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান, এসআই জিহাদ ও এসআই বেল্লাল হোসেনকে প্রত্যাহার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
মঙ্গলবার কলাবাগান থানায় নতুন যোগদান করা ওসি ফজলে আশিক বলেন, মিনি চিড়িয়াখানা থেকে পাখি লুট হওয়ার কোনো তথ্য তার জানা নেই। এ ঘটনায় কেউ কোনো মামলা করেনি। কেউ যদি অভিযোগ করে, সেটি মামলা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এদিকে, গতকাল হাতিরপুলে ২২/২ সোনারগাঁও রোডের মিনি চিড়িয়াখানায় সরজমিনে দেখা গেছে নিরাপত্তা প্রহরী আব্দুল লতিফ ডিউটি করছেন। বেশ কিছু খাঁচায় পাখি দেখা গেলেও ম্যাকাও পাখি ও কাকাতুয়ার খাঁচা শূণ্য। চিড়িয়াখানার ম্যানেজার আব্দুর রহিম বলেন, চিড়িয়াখানা থেকে গ্রিন উইন ম্যাকাও, লু গোল্ড ম্যাকাওসহ ৬ জোড়া ম্যাকাও পাখি নিয়ে গেছে। এছাড়া কাকাতুয়াসহ প্রায় ৪০/৪২ জোড়া পাখি লুট হয়েছে।
মঙ্গলবার স্থানীয় একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, লুট করা পাখি ইস্টার্ণ প্লাজার পাশে এক যুবদল নেতার বাড়িতে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমি থানায় কোনো মামলা করিনি। তবে জানতে পেরেছি যে পুরাতন মাইটিভি ভবনের আশেপাশের কোনো বাড়িতে পাখিগুলো আটক করে রাখা হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, চিড়িয়াখানা লুটের পেছনে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ঘটনার সময় ২৯ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে কলাবাগান থানার এসআই জিহাদ, এসআই বেল্লাল ও একজন কনস্টেবল যখন বাড়ির তিন তলায় আব্দুল ওয়াদুদের বাসায় প্রবেশের চেষ্টার সময় স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিল। পুলিশের উপস্থিতিতে চিড়িয়াখানায় লুটের নেতৃত্ব দেয় ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি, কলাবাগান থানা যুবদলের এক সহোদর নেতা, কলাবাগান থানা শ্রমিক দলের একজন সভাপতি প্রার্থী, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের একজন সাবেক সদস্যসহ অন্তত ৪০/৫০ জন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম বলেন, চিড়িয়াখানা থেকে পাখি লুট হওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে এর সঙ্গে বিএনপি ও যুবদলের কোনো নেতা-কর্মীর সংশ্লিষ্টতা নাই। বরং ঘটনার দিন রাতে আমি ওই বাড়িতে ঝামেলা হচ্ছে জানতে পেরে কলাবাগান থানার ওসিকে ফোন করে বিষয়টি অবগত করি এবং সেখানে পুলিশ পাঠানোর কথা বলি।
তিনি আরও বলেন, মিনি চিড়িয়াখানার মালিক আব্দুল ওয়াদুদ বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য। বিগত ১৬ বছর ধরে তার বাড়িতে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের যাতায়াত। ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও এমপি ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সিনিয়র নেতারা আসতেন। তারা অনেক সময় আসর বসাতেন। তার বাড়িতে পুলিশের দুর্নীতিবাজ সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদও মাঝে মধ্যে এসে আড্ডা দিতেন। আমরা তাকে গ্রেফতারের জন্য সোমবার দুপুরে ইস্টার্ন প্লাজার সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছি।