কাশ্মীরের পেহেলগামের হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই আজ বুধবার ভারতের সব রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির মহড়া হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশে দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগগুলো এই মহড়া পরিচালনা করবে। হঠাৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বা বিমান হানা বা বন্দুকধারীদের হামলা হলে সাধারণ নাগরিকদের করণীয় কী হবে, তারই মহড়া হবে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘যদি যুদ্ধ বাধে তাহলে সামরিক বাহিনী তো থাকবেই, কিন্তু সাধারণ মানুষ তো বসে বসে দেখবে না, তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। সেইসব দায়িত্বই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে এই মহড়ার মাধ্যমে।’ এর মাধ্যমে পাকিস্তানের ওপর একটা চাপও তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন। মহড়ার জন্য কতটা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্রসচিব গোভিন্দ মোহন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন মঙ্গলবার দুপুরে।
মহড়ায় কী হবে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, তাতে দেশের ২৪৪ বেসামরিক প্রতিরক্ষা জেলার শহর থেকে গ্রাম সব এলাকাতেই মহড়া চলবে। বিমান হামলা হলে ঠিকমতো সাইরেন বাজিয়ে সংকেত দেওয়া যাচ্ছে কি না, কন্ট্রোল রুমে কীভাবে কাজ হবে—সবই মহড়ার সময়ে খতিয়ে দেখা হবে। বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। আবার সাধারণ মানুষের কী করণীয় হবে, সেটাও বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বেছে নেওয়া হচ্ছে। বিমান হামলা হলে ‘ব্ল্যাক আউট’ বা সব আলো নিভিয়ে দেওয়ার মহড়াও হবে। অন্যদিকে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীরা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশিক্ষণ ঠিক মতো আছে কি না, আগুন লাগলে তা নেভানোর ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে কি না অথবা উদ্ধারকাজ ঠিক মতো করা যাচ্ছে কি না, সেটাও দেখে নেবে সরকার। গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে অতি দ্রুত রং করে ‘কেমোফ্লেজ’ করে দেওয়ার মহড়াও হবে আজ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলার সরকারি কর্মকর্তা, বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ড, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা এনসিসির ছাত্রছাত্রীসহ নেহরু যুব কেন্দ্র এবং স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মহড়ায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, বুধবার মহড়ার দিন নির্ধারিত হলেও মঙ্গলবার (গতকাল) থেকেই ভারতের নানা এলাকায় মহড়া শুরু হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৬৫ এবং ১৯৭১-এর যুদ্ধের সময়ে ব্ল্যাক আউট করে দেওয়া হত এবং বিমান হামলার সংকেত দিয়ে সাইরেন বাজানো হতো।
হামলা চালাতে পারে ভারত, ইসলমাবাদের সতর্কবার্তা
ভারত যে কোনো মুহূর্তে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সামরিক হামলা চালাতে পারে বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি গতকাল এই সতর্কবার্তা দেন। এদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি মঙ্গলবার জাতীয় পরিষদে দেওয়া ভাষণে ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত করার নিন্দা জানিয়েছেন। পাশাপাশি এটিকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। তিনি ভারতের বিরুদ্ধে পানির রাজনীতিকরণ করার অভিযোগ করেছেন এবং বলেছেন লাখ লাখ মানুষের খাদ্য ও জীবিকা হুমকির মুখে ফেলা পাগলামি। বিলাওয়াল বলেন, পাকিস্তান প্রমাণ করেছে যে ভারত সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত। যা কেবল প্রক্সির মাধ্যমেই নয়, তাদের সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমেও। তাদের এই সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তানের সীমানা ছাড়িয়ে শ্রীলঙ্কা ও কানাডার মতো দেশগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি ভারতকে সন্ত্রাসবাদ পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংলাপের আহ্বান নিরাপত্তা পরিষদের
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানকে উত্তেজনা প্রশমনে ও সামরিক সংঘাত এড়াতে সংলাপ এবং কূটনৈতিক পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। গত সোমবার নিউ ইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে সদস্যরা দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা করেন। পাকিস্তান জানিয়েছে, সভায় উপস্থাপিত গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ভারতের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের হুমকি রয়েছে। পাকিস্তানের বিবৃতিতে বলা হয়, সংঘর্ষ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সদস্যরা সংলাপ ও কূটনীতির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ইসলামাবাদের অনুরোধেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।