বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

কাপ্তাই হ্রদে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

পানি সংকটে থেমে গেছে লঞ্চ চলাচল

আপডেট : ০৭ মে ২০২৫, ২০:৩৪

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী স্পিডবোট চলাচল গত সোমবার থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে এই পথে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ। অপরদিকে দ্রুত কমে যাচ্ছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে নৌপথে লঞ্চ চলাচল। ইতোমধ্যে জেলার ৬টি উপজেলা কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, লংগদু ও বরকল—এই ছয়টি উপজেলা সরাসরি হ্রদের ওপর নির্ভরশীল। বরকল ও লংগদুতে কিছু ছোট নৌযান চলাচল করলেও বাকি চার উপজেলায় পুরোপুরি বন্ধ লঞ্চ চলাচল। রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি জেলা হয়ে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার কিছু এলাকার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও অপর উপজেলায় নৌপথ ছাড়া বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কাপ্তাই হ্রদে পানি সংকটের কারণে অতিরিক্ত ভাড়া হলেও এসব এলাকার জনসাধারণ স্বল্প সময়ে যাত্রীবাহী স্পিডবোটে যাতায়াত করে থাকে।

ছবি: ইত্তেফাক  

এদিকে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এক প্রজ্ঞাপনে সারাদেশের নৌরুটে নৌরুটে স্পিডবোটের ভাড়া নির্ধারণ করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যেখানে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে কাপ্তাই হ্রদের রাঙ্গামাটি ফিসারী ঘাট হইতে মারিশ্য (বাঘাইছড়ি উপজেলা) পর্যন্ত ভাড়া ৮০০ টাকা, মাইনীমূখ (লংগদু উপজেলা) পর্যন্ত ভাড়া ৪৫০ টাকা, জুড়াছড়ি পর্যন্ত ৩২০ টাকা এবং বরকল পর্যন্ত ৩৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এসকল রুটে ভাড়া নেওয়া হয় মারিশ্যা পর্যন্ত একহাজার টাকা, মাইনী পর্যন্ত ৬৫০ টাকা, জুড়াছড়ি ও বরকলে ৫০০ টাকা হারে। কিন্তু স্পিডবোট মালিক ও চালকরা ভাড়া কম নির্ধারণ করার অজুহাতে গত সোমবার থেকে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছে।

রাঙ্গামাটি স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস জানান, আমরা ন্যায্য ভাড়া নিয়ে সেবা দিচ্ছি, তবে নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের ভুলে এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। এভাবে ভাড়া নিলে আমাদের লোকশান দিয়ে চালাতে হবে। আমরা নিরুপায় হয়ে বোট বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ তাদের ভুল সংশোধন করে নতুন প্রজ্ঞাপন দিলেই আমরা সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।

তিনি আরও জানান, রাঙ্গামাটি থেকে লংগদু উপজেলার নৌপথে দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। দূরত্ব হিসেবে ভাড়া হয় ৬৪০ টাকা কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ আছে ৪৫০ টাকা। এই ভাড়ায় স্পিডবোট চালানো কোনোভাবেই সম্ভব না।

ছবি: ইত্তেফাক  

এই নৌরুটে নিয়মিত চলাচলকারী লংগদু উপজেলার মাইনীমূখ বাজারের ব্যবসায়ী কামরুল হাসান জানান, এখন শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই লেকের পানি কমে যাওয়ায় লঞ্চে যাতায়াত করতে অনেক সময় লাগে। স্পিডবোটে কম সময়ে সহজে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু গত ৩ দিন ধরে স্পিডবোট বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছে। দুপুর আড়াইটার পরে রাঙ্গামাটি ও লংগদু থেকে আর লঞ্চ না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে জেলা শহরে থেকে যাচ্ছে।  স্পিডবোট চলাচল করলে সকালে জেলার অফিস আদালতের কাজ শেষ করে লোকজন বিকালে এমনকি রাতেও স্পিডবোটে ফেরত যেতে পারতেন। 

তবে এই রুটে যাতায়াতকারী একাধিক যাত্রী বলেছেন স্পিডবোটের ভাড়া অনেক বেশি। মাইনী থেকে একজন যাত্রীর আসা ও যাওয়া মিলে ১৩০০ টাকা ভাড়া গুণতে হয়। এটা ১০০০ টাকার মধ্যে হলে কিছুটা স্বস্তি পেত যাত্রীরা। 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার কফিল উদ্দিন মাহমুদ জানান, এ বিষয়ে অনেকেই যোগাযোগ করেছে। তারা সবাই নতুন ভাড়া কার্যকর চায়। তবে স্পিডবোটের কার্যক্রম জেলা থেকে পরিচালিত হয়। আমি জেলা প্রশাসক স্যারকে অবগত করেছি। 

অপরদিকে পানি সংকটে থেমে গেছে কাপ্তাই হ্রদের লঞ্চ চলাচল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হ্রদে ড্রেজিং না হওয়ায় প্রতি বছরই এমন সমস্যায় পড়েন স্থানীয়রা। রাঙ্গামাটি জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে মাত্র চারটি সড়ক যোগাযোগে যুক্ত। বাকি ছয়টি উপজেলার জন্য শহরের সঙ্গে একমাত্র ভরসা নৌযান। বর্ষায় যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকলেও, খরায় কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এসব নৌপথ। 

বর্তমানে হ্রদের পানি এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, ডুবোচর জেগে উঠেছে। ফলে, অনেক স্থানেই লঞ্চের তলা আটকে যাচ্ছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে ছোট নৌযানে যাতায়াতকারী যাত্রীদের। 

রাঙ্গামাটি  লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, গ্রীষ্মের শুরু থেকেই হ্রদের পানি দ্রুত কমছে। এখন হ্রদের বিভিন্ন অংশে শত শত ডুবোচর জেগে উঠেছে। ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটির সাতটি পয়েন্টে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি পথগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে।

তিনি জানান, শুধু যাত্রী পরিবহন নয়, পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও দেখা দিয়েছে সমস্যা। ফলে উপজেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ইত্তেফাক/এসএএস