গাজায় ইসরায়েলের 'ক্ষুধা ও গণবিনাশ যুদ্ধ' চলতে থাকলে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অর্থহীন বলে মন্তব্য করেছে হামাস। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম এ কথা জানান। এদিকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৫৯ জন নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাস নেতা বাসেম নাইম বলেন, যতক্ষণ গাজা উপত্যকায় এই যুদ্ধ, ক্ষুধা ও পিপাসার অপরাধ চলতে থাকবে, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতির আলোচনায় কোনো অর্থ নেই।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নেতানিয়াহুর সরকারকে অবশ্যই এই অপরাধ থামাতে বাধ্য করতে হবে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও হত্যাযজ্ঞ এখন নিয়মিত অপরাধে পরিণত হয়েছে। এ বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, গাজার জনগণকে 'সরিয়ে দেওয়া হবে' এবং সেখানে ইসরায়েল 'সম্পূর্ণ দখল ও নিয়ন্ত্রণে' যাবে বলে সামরিক পরিকল্পনা করা হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় সবাই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২ মার্চ থেকে ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধে খাদ্য ঘাটতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল-বালাহ থেকে সাংবাদিকরা জানান, বহু ফিলিস্তিনি শিশু পচা কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে কোনো খাবারই পাচ্ছেন না।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজার ও মানবিক সহায়তা কেন্দ্র-কোথাও এখন আর খাবার নেই। ১০ লাখের বেশি উদ্বাস্তু মানুষের ন্যূনতম চাহিদাও পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস সতর্ক করে বলেছে, গাজার পরিস্থিতি চরম মানবিক বিপর্যয়ে পৌঁছেছে। সংস্থাটির মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান কারডন বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে, ইসরায়েলের দায়িত্ব জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করা।
এদিকে গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ৫৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও শিশু। বুধবার স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানায়। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বিধ্বংসী সামরিক অভিযান এখন ২০তম মাসে প্রবেশ করার প্রাক্কালে নতুন করে সহিংসতা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি।
আল আকসা হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার রাতে গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি স্কুলে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই স্কুলে শতাধিক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। হামলায় ২৭ জন নিহত হন, যার মধ্যে নারী ৯ জন ও শিশু তিন জন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই স্কুলে এটি পঞ্চম হামলা। এদিকে, গাজা সিটির আরেকটি স্কুলে ভোরে হামলা চালিয়ে ১৬ জনকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে আল-আহলি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া গাজার অন্যান্য স্থানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে অন্তত ১৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের স্কুলে হামলার পর ধোঁয়ার বিশাল স্তম্ভ ও আগুনের লেলিহান শিখা দেখা গেছে। প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত আক্রান্তদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। এদিকে এই নতুন রক্তপাতের মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান তীব্র করার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে।
সূত্র: এপি, আলজাজিরা, এএফপি