মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন খেলা উপভোগ্য নহে 

আপডেট : ১০ মে ২০২৫, ০৬:০০

নিঃসন্দেহে ফুটবল বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় খেলা। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বিশ্বকাপের আয়োজন হইতে শুরু করিয়া আমাদের প্রত্যন্ত গ্রামে যখন দুই স্কুলের মধ্যে অথবা দুই পাড়ার মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়, তখন মানুষ সেই খেলা দেখিতে ভিড় করে। ফুটবল সাধারণত ৯০ মিনিটব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। যদি ৯০ মিনিটে জয়-পরাজয় নির্ধারিত না হয়, অর্থাৎ কোনো পক্ষ গোলসংখ্যায় বেশি না থাকে, অথবা যদি কেহ কাহাকেও গোল করিতে সক্ষম না হয়, তাহা হইলে আরো ৩০ মিনিট খেলা বর্ধিত করা হয়।

তাহার পরও যদি জয় পরাজয় নিশ্চিত না হয়, তাহা হইলে পেনাল্টি শুট আউটের মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারিত হইয়া থাকে। সেই ফুটবল ম্যাচে দর্শক উল্লসিত হইয়া ফাটিয়া পড়ে, যাহা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। অর্থাৎ মানুষ যেমন শক্তিশালী দুই পক্ষের খেলা দেখিতে চাহে, তেমনি একটি দল এবং দলের খেলোয়াড়রাও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে খেলিয়া অধিক আনন্দ লাভ করে। বিশ্বকাপ ফুটবল অথবা দেশে দেশে যখন খেলা হয়, তখন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল অথবা জার্মানি-স্পেন খেলা দেখিবার জন্য বাংলাদেশের মানুষও রাত জাগিয়া, সমর্থিত দল বা দেশের পতাকা উত্তোলন করিয়া অধীর আগ্রহে টেলিভিশনের সামনে চোখ বিস্ফারিত করিয়া তাকাইয়া থাকে।

শুধু তাহাই নহে, যাহার যাহার দলকে সমর্থন করিয়া মারামারি-হাতাহাতিতেও লিপ্ত হয় ফুটবলের উত্তেজনায়। কিন্তু লক্ষণীয়, যেই ফুটবল ম্যাচ দুইটি অসম প্রতিপক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, তাহাতে কোনো উত্তেজনা থাকে না, উহা উপভোগ্য হয় না, এমনকি দর্শকরাও তাহা উপভোগ করাকে সময় নষ্ট বলিয়া মনে করে। যেমন ইউরোপীয় ন্যাশনস কাপে ফ্রান্স, স্পেন বা পর্তুগালের সঙ্গে যখন ছোট ও দুর্বল দেশের খেলা অনুষ্ঠিত হয়, অথবা দক্ষিণ আমেরিকার কোপা কাপে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের ফুটবলে অতি দুর্বল কোনো দলের সঙ্গে খেলা অনুষ্ঠিত হয়, তাহা কাহারো নজর কাড়ে না। উহা কেবলই আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা বলিয়া বিবেচিত হয়।

এই খেলাকে ক্লাব পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করিতে লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করিয়া খেলোয়াড় ভাড়া করা হয়। বর্তমানে জমিয়া উঠিয়াছে সৌদি আরবের ফুটবল লিগ। সৌদি লিগের আল নাসর, আল ইত্তেহাদ, আল হিলাল, আল খালিজ প্রমুখ দল কোটি কোটি ডলার খরচ করিয়া ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার নামিদামি খেলোয়াড় দলে ভিড়াইতেছে। খেলোয়াড়রাও অতি আগ্রহের সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে আসিয়া এই সকল দলে যোগদান করিতেছে। এই সকল খেলা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ায় উত্তেজনাও ছড়াইতেছে এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকরা সৌদি লিগ দেখিতেছে। রাত জাগিয়া এখন সৌদি লিগ দেখিবার জন্য বাংলাদেশের দর্শকরা মুখাইয়া থাকে। ইহার কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ফাঁকা মাঠে গোল কেহ দিতেও চাহে না, সমর্থক-দর্শকরাও তাহা দেখিতে চাহে না, উপভোগ করে না, উত্তেজনাপূর্ণ ও আনন্দঘন জয় আসে না।

যেইহেতু ফুটবল সবচাইতে জনপ্রিয় খেলা, তাই ফুটবল হইতেই আমরা উদাহরণ টানিলাম। কিন্তু প্রতিটি খেলায় এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দর্শকরা কামনা করিয়া থাকে। যাহারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহারাও ফাঁকা মাঠ চাহেন না। যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলকে বলা হয় সকার। কিন্তু ফুটবল যেই খেলাকে বলা হয়, তাহা অনেকটাই রাগবি খেলার মতো, কেবল নিয়মকানুনে পার্থক্য। এই খেলা যুক্তরাষ্ট্রে খুবই জনপ্রিয় এবং বিভিন্ন স্টেটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হইয়া থাকে। এই খেলারই একজন বিখ্যাত ও জনপ্রিয় খোলোয়াড় অ্যানড্রিউ হোয়াইটফোর্থ বলিয়াছেন, If you are a true warrior, competition does not scare you. It makes you better. আমরাও মনে করি, যেই প্রতিযোগিতায় বা জয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাই, তাহাতে কোনো কৃতিত্বও নাই।

ইত্তেফাক/এএম