শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

নিরাপত্তা পাচ্ছেন না ফুটবল রেফারিরা 

আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ১৩:১০

ফুটবল দুনিয়ায় মাঠে খেলা শুরু হওয়ার আগে, খেলা চলাকালীন কিংবা খেলা শেষ হওয়ার পর রেফারিদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকে। রেফারিদের সিদ্ধান্ত কারও অপছন্দ হলেও কিছু করার থাকে না। তবুও রেফারিরা সুরক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়া-আসা করেন। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলে উলটো চিত্র। রেফারিরা আক্রোশের শিকার হচ্ছেন মাঠে। 

অনুষ্ঠানরত বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ম্যাচে মাঠে ঢুকে রেফারিকে মারধর করা হয়েছে। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। কিন্তু বাফুফে এসবের খবর রাখে না। রেফারিদের দাবি অনেক ম্যাচে বাফুফের লোকজনও মাঠে আসে না। খেলা হয় এতিমের মতো। সব দায় থাকে রেফারি, সহকারী রেফারি, ম্যাচ কমিশনারের। কোনো রকমে ম্যাচটা শেষ করার সব দায়িত্ব যেন তাদের। সেটা দেখে বাফুফের লোকজনও আস্থা রাখে, মাঠে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। 

বসুন্ধরা কিংসের মাঠে প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী-বসুন্ধরা ম্যাচে ম্যাচ কমিশনার সুজিত কুমার ব্যানার্জীর গায়ে ধাক্কা দিয়েছেন কিংসের ফুটবলার সাদ উদ্দিন। তিনি জাতীয় দলে খেলেন। এমন একজন ফুটবলার কীভাবে ম্যাচ কমিশনারকে ধাক্কা দেন। একজন সিনিয়র ফুটবলারের এমন আচরণ দেখে জুনিয়ররা কী শিখবেন। সাদ উদ্দিন নিজেকে ব্যাডবয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। ক্লাবের পরিচয়টাকে ব্যবহার করেও মাঠে রেফারিদের সঙ্গে বাজে আচরণ করা হচ্ছে। বসুন্ধরা কিংস-আবাহনী ম্যাচের পর যেভাবে হট্টগোল বেধে ছিল তার মূলে ছিলেন কিংসের দুজন স্টাফ। তারা মাঠে ঢুকে নিরাপত্তা নষ্ট করেছেন। 

আগে একবার বড় ঘটনা ঘটেছিল প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে। ১৯৭৯ সালে স্ট্রাইকার এনায়েত রেফারি দলিল খানের গায়ে হাত তুলে নিষিদ্ধ হলেও পরে সেটি প্রত্যাহারও করা হয়েছিল। সেটাই ছিল ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। আশির দশকের ফুটবলে রেফারির গায়ে হাত তুলে শাস্তি পেয়েছেন অনেক ফুটবলার। 

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে এবার রেফারিকে মারধরের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তিনটি ঘটনা ঘটেছে। পরশু পূর্বাচলে জলসিঁড়ির মাঠে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে রেফারি নয়ন চৌধুরীকে মারতে মারতে মাটিয়ে শুয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাকে যেভাবে মারা হয়েছে তা দেখে রীতিমতো সবাই বিস্মিত। নিরাপত্তা নেই। যে কেউ মাঠে ঢুকে রেফারিকে মারতে পারেন। চারদিকে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। চাইলেই দৌড়ে রেফারিতে ছোঁয়া যায়। ওখানে নেই কোনো সিকিরিউটি। রেফারিদের জন্য সিকিরিউটি নেই। পরশুর ঘটনার আগেও বিসিএলের খেলায় রেফারিকে মারা হয়েছে। একই ভেন্যুতে এবার দুই দুই বার রেফারি মারধরের শিকার হলেন। 

বিসিএলের খেলায় গাজীপুরেও রেফারি মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সহকারী রেফারির হাত থেকে ফ্ল্যাগ কেড়ে নিয়ে সেটা দিয়ে রেফারি জসিমকে মারতে গিয়েছেন। সাইড লাইন থেকে অনেকেই মাঠে ঢুকে পড়েছেন। ক্লাব কর্মকর্তা জুতা হাতে মাঠে ঢুকে রেফারিকে মারতে যাচ্ছেন। রেফারি সহকারী রেফারি জীবন বাঁচাতে দৌড়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। উত্তেজনা মুহূর্তে ক্লাবগুলো রেফারিদের গায়ে হাত তুলছেন। তাদের সঙ্গে থাকা লোকজন গিয়ে মারতে যাচ্ছেন। আর খেলা শেষ হয়ে ক্লাবগুলো এগিয়ে এসে বলছে যারা মারামারি কছে তাদেরকে চেনেন না। 

একজন রেফারি নাম প্রকাশ না করে বলছেন, 'ক্লাবের যেসব লোকজন রেফারিকে মারছেন তারাই খেলা শেষে বলছেন আমরা ওদেরকে চিনি না। আমাদের ক্লাবের কেউ না-ক্লাবের কেউ না হলে পথচারীরা কেন মারামারি করবে।' 

রেফারিরা বলছেন, 'এমনিতেই পারিশ্রমিক পাই না। তার ওপর আমরা মাঠে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদেরও আত্মীয়স্বজন আছে, পরিবার আছে, সামাজিক মর্যাদা আছে। এভাবে রেফারিরা যদি মার খেতে থাকে তাহলে জীবন হুমকির মধ্যে পড়বে। জলসিঁড়ির মাঠে যেভাবে রেফারিকে মারা হয়েছে এটা রীতিমতো অ্যাটেমড টু মারডার। এসব ক্ষেত্রে মামলা হওয়া উচিত।'

ইত্তেফাক/জেডএইচ