রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর শরলার বিল আশ্রয়ণ প্রকল্পে কমিউনিটি পাঠাগার ও স্কুল নির্মাণে বাধা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ৩২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বুধবার (১৪ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা এই ঘটনাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী’ বলে উল্লেখ করেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
স্থানীয়ভাবে ‘প্রজন্ম সমাজ-সংস্কৃতি কেন্দ্র’ এর ব্যানারে গড়ে তোলা এই পাঠাগার ও স্কুলটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৫০টি ভূমিহীন ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চর্চার একটি উন্মুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠছিল।
উদ্যোক্তা কবি ও সমাজকর্মী মীর রবি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য কাজ করে আসছি। কিন্তু সম্প্রতি জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রওশন জামিল ও তার সহযোগীরা কাজে বাধা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, পূর্বে ব্যক্তিস্বার্থবিরোধী অবস্থানের কারণে রওশন জামিল তার উদ্যোগকে টার্গেট করছেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঠিকাদারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলে আখ্যা দিয়ে নির্মাণকাজে মব তৈরি করে বাধা সৃষ্টি করেন। একইসঙ্গে মীর রবিকে সামাজিক মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
এই ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন—অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শহীদ ইকবাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়হান রাইন, কবি ও অধ্যাপক অভী চৌধুরী, লেখক সৈকত আরেফিন, কার্টুনিস্ট মেহেদী হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা দিদারুল ভূঁইয়া, কবি নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, শাহেদ কায়েস, সঞ্জীব পুরোহিত, নাহিদ হাসান নলেজসহ আরও অনেকে।
বিবৃতিতে বলা হয়, পাঠাগার ও স্কুল নির্মাণে বাধা শুধু একটি স্থাপনা বন্ধ করা নয়, এটি একটি প্রজন্মের সম্ভাবনা ও সাংস্কৃতিক বিকাশের পথ রুদ্ধ করার অপচেষ্টা। এমন উদ্যোগের বিরুদ্ধে কাজ করা ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সমাজে বৈষম্য টিকিয়ে রাখার কৌশলের অংশ। তাঁরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে নির্মাণকাজ পূর্ণভাবে চালু করা যায় এবং উদ্যোক্তারা নিরাপদে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
উল্লেখ্য, অন্নদানগরের আশ্রয়ণ প্রকল্পে শিক্ষার আলো ছড়াতে নেওয়া এই উদ্যোগটি উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ও তত্ত্বাবধানে চলছিল। কিন্তু নির্মাণকাজ চলাকালীন কিছু ব্যক্তি হস্তক্ষেপ করে তা বন্ধ করতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।