শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে দেশ পরিচালনা করিতে হইবে

আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, ০৩:৩৬

বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে রহিয়াছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাহাকে সহায়তা করিবার জন্য রহিয়াছেন উপদেষ্টামণ্ডলী। মোটামুটিভাবে সংবিধানের আলোকে তাহাদের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সরকারি কার্যকলাপ বাস্তবায়ন করিবেন, ইহাই নিয়ম ও স্বাভাবিক। এই সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিধায় কোনো রাজনৈতিক দল বা উপদল দ্বারা পরিচালিত হয় না বা হওয়ার কথা নহে; কিন্তু লক্ষ করা যাইতেছে যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নির্দেশেই প্রশাসন চলিতেছে। বর্তমান সরকারের বয়স এখন ৯ মাস। এই অবস্থায় বিশৃঙ্খলা দূর করিয়া সকল কিছু নিয়মকানুনের মধ্যে আনয়ন করা উচিত। তাহা না হইলে প্রশাসনে ঐ সমস্ত দল বা সংগঠন যে নৈরাজ্য ও উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করিতেছে, আজ হউক বা কাল হউক ইহার সমস্ত দায়দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত দেশের প্রধান নির্বাহী ও তাহার সহযোগীদের স্কন্ধেই আসিয়া পড়িবে।

উক্ত দল বা সংগঠনের যেই সকল লোক বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে সরকারি প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করিয়া চলিয়াছেন, তাহারা কি সরকারের অংশ? তাহাদের অনেকে তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতার দাপট দেখাইয়া বেড়াইতেছেন এবং চাঁদাবাজি-দখলবাজি হইতে শুরু করিয়া হেন কোনো অন্যায়-অপকর্ম নাই যাহা করিতেছেন না। তাহাদের দৌরাত্ম্যের কারণে সাধারণ মানুষ দিনদিন অতিষ্ঠ হইয়া পড়িতেছেন। তাহাদের যন্ত্রণায় তাহারা ত্যক্তবিরক্ত। তাহাদের কারণে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও তটস্থ। অনেক ক্ষেত্রে ডিসি, এসপি, ইউএনও-ওসিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করিতে পারিতেছেন না। নির্বাচন না হইলেও যাহারা নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করিতেছেন, কেহ-বা আবার শেষ পর্যন্ত তাহাদেরই পক্ষাবলম্বন করিতেছেন। ঠিক এই সরকারের পূর্বে যেমন সরকারি দলের লোকজনের নানান অপকর্মে সাধারণ মানুষ অসহায় হইয়া পড়িয়াছিলেন, বর্তমানেও অনুরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হইতেছে বলিলে কি অত্যুক্তি হইবে? অথচ এই সরকারের তো কোনো রাজনৈতিক দল বা বিশেষ কোনো দলের এজেন্ডা নাই। ফলে এখনই এই সকল বিশৃঙ্খলাকারীদের লাগাম টানিয়া ধরিতে না পারিলে ভবিষ্যতে ইহা লইয়া প্রশ্ন উঠিতে পারে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জটিলতাও সৃষ্টি হইতে পারে। তাহারা যেইহেতু সরকারের সহিত সংশ্লিষ্ট নহেন, তাই তাহাদের এই দৌরাত্ম্য অব্যাহত থাকিলে অনেকে দেশকে মগের মুল্লুকের সহিত তুলনা করিতে পারেন। ইহা দেশ, জাতি কাহারও কাম্য হইতে পারে না। ইহা আইনের দৃষ্টিতেও যে প্রশ্নবিদ্ধ হইবে না তাহারই-বা নিশ্চয়তা কোথায়?

বর্তমান সরকার যেইহেতু একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার, তাই তাহারা পক্ষপাতিত্বের দোষে দুষ্ট নহেন। যদি স্থানীয় প্রশাসন হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার সংশ্লিষ্ট নহে এমন কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির আদেশ-নির্দেশের প্রতিফলন বাড়িতে থাকে, ইহার পরিণতিতে দেশের সাধারণ মানুষের নাভিঃশ্বাস হয় এবং ইহার জেরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমালোচনার বিষয়বস্তু হইয়া পড়েন, তাহা হইলে তাহার দায় ও দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে এড়াইয়া যাইবেন? বর্তমানে হাটবাজার, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খলা দেখা যাইতেছে তাহাতে সাধারণ মানুষ হতাশ ও হতবিহ্বল। তাই উপরিউক্ত দল বা ব্যক্তিদের অন্যায়-অপকর্ম অবশ্যই বন্ধ করিতে হইবে। ইহা ছাড়া আরো নানা জটিল প্রশ্ন রহিয়াছে এবং এই সকল বিবেচনা করিয়াই সরকারকে দেশ পরিচালনা করিতে হইবে।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন