শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

‘মোহামেডানের শিরোপা শতভাগ হালাল’ 

আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ১৪:৪৯

ভর দুপুর থেকে মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান টেন্টে সংবাদকর্মীদের ভিড়। ঢেউ টিনের চালের ঘরে কোচ আলফাজ আহমেদ, ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব, সাবেক ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি, সাব্বির, কাননসহ সাংবাদিকদের লিগ চ্যাম্পিয়ন নিয়ে আলোচনা। অতীতে কবে ১০ পয়েন্ট হাতে নিয়ে এবং ৩ ম্যাচ বাকি থাকতে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তা মনে করতে পারলেন না জনি। 'আমার মনে হয় না আমরা কখনো ১০ পয়েন্ট হাতে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছি-বললেন জনি। 

রক্ষণভাগের এই ফুটবলার আবাহনী থেকে মোহামেডানে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮৬ সালে। প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে আবাহনীর পর হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের বছরে জনি যোগ দেন মোহামেডানে। মোহামেডানের হয়ে ফুটবলে শিরোপা পেয়েছেন। মাঠ থেকে সমর্থকদের ভিড় ঠেলে বের হওয়ার পরিস্থিতি ছিল না। ক্লাবে ফিরে রং ছড়াছড়িতে সাদা রঙের জার্সি লালে পরিণত হয়েছিল। কর্মকর্তাদের ভিড় ছিল, সমর্থকরা ক্লাবের গেট উপচে প্রবেশ করেছিলেন। 

বাঁধভাঙা সমর্থকদের সেই ছবি আর এখনকার ছবির মধ্যে পার্থক্য অনেক। তারপরও জনি আবেগাপ্লুত। 'আমার কাছে এই ট্রফি জয়ের আনন্দ অন্যরকম, কারণ প্রিমিয়ার লিগে প্রায় ২৩ বছর পর মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এটা একদিকে যেমন মোহামেডানের জন্য প্রথম সাফল্য তেমনি দেশের ফুটবলের জন্য বড় মাইলফলক। পৃথিবীর যেখানে যেখানে বাংলাদেশি মানুষ রয়েছেন তারা সবাই মোহামেডানের শিরোপা জয়ে একবাক্যে খুশি হবেন। সমর্থক-নির্ভর মোহামেডান-আবাহনী যখনই শিরোপা জয় করবে, তখনই সেটা সাধারণ ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে, রোমাঞ্চ তৈরি করে। মোহামেডানের লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা দেশের ফুটবলের জন্য মাইলফলক বটে।' 

২০০৭ সালে পেশাদার ফুটবল লিগ প্রবর্তনের পর মোহামেডান প্রথম তিন আসরে রানার্সআপ হয়েছিল, তারপর থেকে মোহামেডান নিচের দিকে নামতে থাকে। একটা পর্যায়ে আশঙ্কা মোহামেডান সমর্থকদের মধ্যে চেপে বসেছিল, কখন না রেলিগেশন হয়ে যায়। এভাবে চলতে চলতে বিস্মৃতিতে চলে যাচ্ছিল মোহামেডান। জনি বললেন, 'এখনকার প্রজন্ম হয়তো মোহামেডানকে চিনবেও না।' 

জনির চোখে বিস্মৃতি থেকে আলোয় ফিরে আসা মোহামেডানের গল্পটা কঠিন ছিল। সব খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা, ক্লাবের নীতিনির্ধারকরা অনেক সংকটের মধ্যেও শপথ নিয়েছিলেন মোহামেডানকে তুলে ধরবেন। ছাইদ হাসান কানন বললেন, 'দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। এমন অবস্থায় মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন করানোটা কঠিন ছিল, কারণ খেলোয়াড়রা পারিশ্রমিকের দিক থেকে অনেক সেক্রিফাইস করেছে।' 

ফুটবল ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিবের দুশ্চিন্তাটা অন্য জায়গায়, লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় মোহামেডান এএফসির টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাবে। এএফসি থেকে একটা স্লট পাবে, সেটি লিগ চ্যাম্পিয়ন দল গ্রহণ করতে পারবে। মোহামেডানের ক্লাব লাইসেন্স না থাকলে যেতে পারবে না। নকিব ভাবছেন এএফসির টুর্নামেন্টে খেলতে হলে বড় বাজেট খরচ করতে হবে, দল প্রস্তুত করতে হবে। সবকিছু নির্ভর করছে নীতিনির্ধারকদের ওপর। তারা কী চান সেটাই আসল কথা।' ছাইদ হাসান কাননের কথা হচ্ছে এখন আমরা লিগ চ্যাম্পিয়ন হলাম, আগামীতে যদি ভালো দল না করি তাহলে লাভ কী।' 

দুপুর গড়িয়ে বিকাল, লিগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের সব খেলোয়াড় একে একে অনুশীলনে নেমে পড়লেন, মোহামেডানের উঠানে অনুশীলন। সবার ক্যামেরা খেলোয়াড়দের দিকে। চার বছর ধরে প্রায় একই দল মোহামেডানের। কিছু ফুটবলার চলে গেছেন, কিছু এসেছেন। একই কোচ অনুশীলন করিয়েছেন যে কারণে ফেডারেশন কাপ জিতেছিল ১৪ বছর পর, গতবার লিগ রানার্সআপ হয়েছিল আর এবার চ্যাম্পিয়ন হলো। 

মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ।

অনুশীলনে নামার আগে কোচ আলফাজ আহমেদ বললেন, 'সবকিছুর পেছনে ছিল দলীয় একাগ্রতা আর শৃঙ্খলা।' এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে টার্নিং পয়েন্ট কোনটি? জবাবে আলফাজ বললেন, 'বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ঢাকায় ম্যাচ জেতার পর আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।' 

বসুন্ধরা কিংসের তুলনায় মোহামেডানের খেলোয়াড় কিংবা বাজেট কোথাও তুলনা হয় না। তারপরও আলফাজের মোহামেডান লিগের দুই পর্বে কিংসের কাছ থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়েছে। আবাহনীর কাছ থেকে দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়েছে। এখানেই তো ১০ পয়েন্ট চলে এসেছে। 

আগামী তিন ম্যাচ হারলেও মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন। তারপরও মোহামেডান সেটি ভুলে মাঠে অনুশীলনে মন দিয়েছে। ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার রেজাল্ট পেয়েও পড়ার টেবিল ছাড়েনি মোহামেডান। খেলোয়াড়দের চোখে অনেক কষ্টে পাওয়া এই সাফল্য এটি। খেলোয়াড়রা বলছেন, 'আমাদের মোহামেডানের শিরোপা শতভাগ হালাল। কোনো বিতর্ক নেই। কানাঘুষা নেই। পরিশ্রম করে পাওয়া ফসল।'

ইত্তেফাক/জেডএইচ