রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সিঙ্গেল ডাচ রোপ ও হুলা হুপ ঘুরিয়ে বাংলাদেশি বালকের বিশ্বরেকর্ড

আপডেট : ২৯ মে ২০২৫, ১৫:০০

১০ বছরে পা দিতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি ছিলো আমান হোসেনের। কিন্তু এরই মধ্যে একটি অভাবনীয় ও বিস্ময়কর গৌরব অর্জন করে সে। নিজের চেয়েও বড় এই অর্জনে অভিভূত হয়ে পড়ে তার অভিভাবক, বন্ধুবান্ধব, স্কুল এমনকি আশপাশের পরিচিত মানুষরাও। আর হবেই বা না কেন! সিঙ্গেল ডাচ রোপে দড়ি লাফের পাশাপাশি, কোমড়ের চারপাশে হুলা হুপ ঘুরানোর বিশ্বরেকর্ডটি এখন তার দখলে। 

মাত্র ১ মিনিটে সিঙ্গেল ডাচ রোপ ৫৯ বার লাফের পাশাপাশি, কোমরের চারপাশে ২২৭ বার হুলা হুপ ঘুরিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়া আমান, একদিনে এই সাফল্য অর্জন করেনি। কৌতূহল ও একনিষ্ঠ চিত্তে প্রচেষ্টার মাধ্যমে যেকোনো সাফল্য অর্জন সম্ভব, আমান আমাদের সামনে তারই উদাহরণ তৈরি করলো। গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল – সাতারকুলের কৃতি শিক্ষার্থী আমান গত বছরের শেষদিকে এই বিরল গৌরব অর্জন করে। আর তার এই সাফল্যের পেছনে শক্তি হিসেবে কাজ করেছে অদম্য কৌতূহল ও নিরলস একাগ্রতা। 

কৌতূহলী ও একাগ্র হলে যেকোনো সাফল্য যেকোনো বয়সে অর্জন করা সম্ভব, তাই যেন আবার প্রমাণ করে দেখাল আমান। এক্ষেত্রে বয়স বা প্রতিভা কোন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ছোটোবেলা থেকেই অসম্ভব কৌতূহলী আমানকে নিয়ে তাই তার গর্বিত বাবা মৌমিত শাহরিয়ার বলেন, “আমান যেকোনো বিষয়ে সবসময়ই কৌতূহলী।  মাত্র ৯ বছর বয়সে এমন একটি প্রতিযোগিতায় বিশ্বরেকর্ড গড়ায় আমরা সত্যিই বিস্মিত।”

সিঙ্গেল ডাচ রোপে দড়ি লাফের পাশাপাশি, কোমড়ের চারপাশে হুলা হুপ ঘুরানোর বিশ্বরেকর্ডটি এখন আমানের দখলে।

আমানের সাফল্যের পেছনে কেবল কৌতূহল যথেষ্ট ছিলো না। এই সাফল্য অর্জনে তাকে ধারাবাহিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়েছে। তাকে তার শিক্ষক ও কোচ তানিয়া আক্তার মূল্যায়ন করে বলেন, “আমানকে দীর্ঘসময়ের প্রশিক্ষণ ও রুটিনের মধ্য দিয়ে প্রস্তুত হতে হয়েছে; না পারলেও বারবার চেষ্টা করেছে। বিশ্বে প্রথমবার এই রেকর্ডটি আমার ছাত্র করেছে। এতে আমি গর্বিত।” কোনো সাফল্য অর্জন করতে গেলে, বিফল হলেও হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। বরং, লাগাতার প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আর এটাকেই আমান সফলভাবে করতে পেরেছে বলেই আজ সাফল্য এসে তার কাছে ধরা দিয়েছে। 

আমানকে নিয়ে তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের পাশাপাশি, স্কুলও সমানভাবে উচ্ছ্বসিত। বিশেষ করে, আমানের প্রশিক্ষণ বা অনুশীলন স্কুলেই শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। শিক্ষার্থীর অদম্য কৌতূহলকে কাজে লাগিয়ে তাকে আরও একাগ্র ও মনোযোগী করে তোলা, তাকে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে সাফল্যের জন্য আরও বেশি যোগ্য করে তোলা; শিক্ষার্থীকে তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেয়াই যেন একটি স্কুলের কৃতিত্ব। 

আর এ কারণেই আমানের সাফল্যের আনন্দের সমান ভাগীদার তার স্কুল গ্লেনরিচ। অবশ্য স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, স্কেটিং, রোলার স্কেটিং, রোপ স্কিপিং, রোল বল, দাবা, শুটিংসহ সব ধরনের খেলাধুলার জন্য নিজস্ব মাঠ রয়েছে। আমানের বিশ্বরেকর্ডে আনন্দিত তার স্কুলের প্রিন্সিপাল রমেশ মুডগাল। তিনি জানান, আমান তাদের স্কুলকে একটি সাফল্য এনে দিয়েছে। এই অর্জন কেবল বাংলাদেশের নয়, বরং সারাবিশ্বের কাছেই স্কুলকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের সাফল্য অর্জনে তাই সবসময় পাশে থেকে সহযোগিতা করতে চান তিনি।

ইত্তেফাক/এএইচপি