টানা পঞ্চম দিন অচল ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতের সঙ্গে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে চিকিৎসাসেবা। এতে করে প্রতিদিনই চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগীকে ফিরে যেতে হচ্ছে।
রোববারও হাসপাতালটিতে কোনো চিকিৎসাসেবা চালু করা যায়নি। সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। সকাল থেকেই হাসপাতালের সামনে চিকিৎসা নিতে আসা অনেককে জড়ো হতে দেখা যায়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নতুন রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। এছাড়াও আগে যেসব রোগী হাসপাতাল থেকে আগে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের অনেকে ফলোআপের জন্য এসেছেন। আবার অনেকে আসছেন অপারেশনের জন্য। হাসপাতাল বন্ধ থাকায় সেবা না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চোখের চিকিৎসা করতে আসা রোগীরা।
এদিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের আশপাশের হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ থেকে সেবা নিতে পরামর্শ দিয়েছে।
গতকাল শনিবার হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকরা কাজে ফিরতে রাজি নন। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। চিকিৎসাসেবা দ্রুত চালুর ব্যাপারে চেষ্টা করছি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক।’
অচলাবস্থা কাটাতে গত শুক্রবার হাসপাতালের কয়েকজন সচিব, হাসপাতাল প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বৈঠক হলেও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। হাসপাতালটির চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধা রোহান আহমেদ বলেন, আমি হাসপাতালেই আছি। সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। আমাদের খাবার ও ওষুধ বাইরে থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। দুপুরে চিকিৎসা চালুর বিষয়ে বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
গত বুধবারও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাসহ এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবু বকর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আহত ৮-১০ জন জুলাই যোদ্ধাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করার বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, পুরো সেবা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, হাসপাতালের ভেতর জুলাই যোদ্ধাদের কিছু অংশ সহিংস আচরণ করেছে। ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে বারবার। এতে আতঙ্কে রয়েছেন চিকিৎসক ও স্টাফরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে ৫০ জন জুলাই যোদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি। আত্মহত্যার চেষ্টা করা চারজন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন সিএমএইচে ভর্তি আছেন। এ ছাড়া প্রায় ১৫০ জন সাধারণ রোগী ছিলেন, যারা নিরাপত্তার অভাবে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।
যে ঘটনার জেরে অচলাবস্থা
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী সঠিক চিকিৎসা না পাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ২৫ মে বিষপান করলে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে। এরপর ২৭ মে পরিচালকের কক্ষে গিয়ে আরেক আহত শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়; তৈরি হয় অবিশ্বাসের আবহ। এরপর গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থায় যায়। হাসপাতালে ভর্তি জুলাই যোদ্ধা, কর্মচারী এবং রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।
প্রসঙ্গত, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় এসব রোগীকে এখন অন্যান্য হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।