ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্স পাওয়া গেছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়।
ব্ল্যাকবক্স নামক শক্তপোক্ত যন্ত্রটি উড়োজাহাজের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য রেকর্ড করে রাখে। যন্ত্রটি পাওয়া গেছে চিকিৎসকদের হোস্টলের ছাদে। এ ভবনে উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়েছিল।
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরোর (এএআইবি) একটি বড় দল এবং গুজরাট সরকারের ৪০ জন কর্মী ব্ল্যাকবক্স বা ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ডিএফডিআর) উদ্ধার করেন।
ব্ল্যাকবক্সটি দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ দুর্ঘটনা ভারতের অন্যতম প্রাণঘাতী উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিমানের গতি, উচ্চতা, ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স, ককপিটের অডিওসহ পাইলটদের এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মধ্যে হওয়া কথোপকথনের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্ল্যাকবক্সে সংরক্ষিত থাকে। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায়ও এর তথ্য-উপাত্ত নষ্ট না হয়।
যন্ত্রটি সাধারণত স্টিল ও টাইটেনিয়ামের মতো টেকসই ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়। এতে দুটি প্রধান অংশ থাকে—ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ডিএফডিআর) এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)। ডিএফডিআর ফ্লাইট–সংক্রান্ত কারিগরি তথ্য সংরক্ষণ করে। অন্যদিকে সিভিআর ককপিটের শব্দ, পাইলটদের কথাবার্তা এবং রেডিওর মাধ্যমে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য সংরক্ষণ করে।
টাটার মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়ার এই উড়োজাহাজে যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র একজন যাত্রী বেঁচে আছেন। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক বিষ্ণু কুমার রমেশ।
টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে তদন্তকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
চন্দ্রশেখর বলেন, ‘প্রশিক্ষিত তদন্তকারীরা আমাদের বোঝাতে সাহায্য করবেন, কীভাবে একটি সাধারণ ফ্লাইট এমন বিপর্যয়ে পরিণত হলো।’
এই নির্দিষ্ট বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি ১২ বছর আগে তৈরি হয়েছিল।
আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের একটি সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিমানটি রানওয়েতে গতি নিয়ে উড়াল দিচ্ছে, সেই মুহূর্তে সবকিছু স্বাভাবিক লাগছিল, কিছুই অস্বাভাবিক মনে হয়নি। কয়েক সেকেন্ড পর উড়োজাহাজটি উড়ে যায়। তখনো কোনো অশুভ ইঙ্গিত ছিল না।
এরপরই দেখা যায়, উড়োজাহাজের উচ্চতা বাড়ছে না, যেটা এ ধরনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের জন্য স্বাভাবিক নয়। কয়েক সেকেন্ড সমান্তরালভাবে ওড়ার পর এটি দ্রুত নিচে নামতে শুরু করে। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, এই ফ্লাইট আর গন্তব্যে পৌঁছাবে না।
এরপরই উড়োজাহাজটি রানওয়ের শেষ প্রান্ত থেকে কিছুটা দূরে একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর সজোরে ধাক্কা দিয়ে আছড়ে পড়ে।