শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শসা চাষে পালটে গেছে রূপসার ২৮ গ্রামের চিত্র

আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:০১

চারিদিকে সবুজের সমারোহ। রাস্তার পাশে বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুধুই সবুজে ঘেরা শসা খেত। ঘেরের পাড় বা আইলে সারি সারি মাচায় ঝুলছে শসা আর শসা। শসা চাষ পালটে দিয়েছে খুলনার রূপসা উপজেলার ২৮ গ্রামের চিত্র। রূপসা উপজেলার একটি গ্রাম আনন্দনগর। এ গ্রামে রয়েছে ছোটো বড়ো অনেক মাছের ঘের। আজ থেকে মাত্র কয়েক বছর আগেও এসব ঘেরের পাড়ে কোনো ফসল চাষ করা হত না। পতিত অবস্থায় পড়ে থাকতো ঘেরের পাড়ের জমি। এখন মাছের ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে আনন্দনগর গ্রামের কৃষকদের জীবনে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী। শসা চাষ করে বেকার সমস্যার সমাধানের পথও খুঁজে পেয়েছেন অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রূপসা উপজেলার দুর্জনীমহল, ডোমরা, চন্দনশ্রী, ভবানীপুর, পেয়ারা, জাবুসা, আমদাবাদ, দেবীপুর, নৈহাটী, সামন্তসেনা, তিলক, খাজাডাঙ্গা, স্বল্পবাহিরদিয়া, আলাইপুর, পুটিমারি, আনন্দনগর, পিঠাভোগ, গোয়ালবাড়িরচর, সিঁন্দুরডাঙ্গা, নারিকেলী চাঁদপুর, ডোবা, বলটি, নতুনদিয়া, ধোপাখোলা, গোয়াড়া, শিয়ালী, চাঁদপুর ও বামনডাঙ্গা গ্রামের মাছের ঘেরের পাড়ে কয়েক’শ হেক্টর জমিতে এবছর শসা চাষ হয়েছে।

আনন্দনগর গ্রামের শসা চাষি মুরাদ লস্কর জানান, এ বছর তিনি ৫০ শতক ঘেরের পাড়ের জমিতে টাকি নামের হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করেছেন। তিনি শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘেরের পাড়ে দুই হাত দূরে দূরে গর্ত করে শসা বীজ বপন করেন। বীজ বপনের দেড় মাস পর থেকে শসা সংগ্রহ শুরু করেছেন। গ্রামের আড়তে পাইকারি বিক্রেতার কাছে তিনি প্রতিমণ শসা ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তার এই ৫০ শতক ঘেরের পাড়ের জমিতে শসা চাষ করতে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন। ঘেরের পাড়ের এ জমি থেকে আরো দেড় লাখ টাকার শসা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

একই গ্রামের কৃষক জুম্মান লস্কর। তিনিও এ বছর ঘেরের এক বিঘা জমিতে গ্রিন লাইন জাতের শসা চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। তিনি  এ পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন। এছাড়া আরো ৩০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। মুরাদ লস্কর ও জুম্মান লস্কর ছাড়াও আনন্দনগর গ্রামের চাঁন মিয়া, সানু লস্কর, ইমতিয়াজ লস্কর, আবু সালেহ, লাবলু লস্কর, বনি আমিন, আ. রহমান গাজী ও জাবের লস্করসহ প্রায় শতাধিক কৃষক মাছের ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

ঘেরের পাড়ে উত্পাদিত শসা কেনা-বেচার জন্য গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠেছে শসার মৌসুমী আড়ত। তাই শসা বিক্রি করতে সাধারণত পরিবহন খরচ লাগে না। কৃষকেরা খেত থেকে শসা তুলে এনে আড়তে বিক্রি করেন। শসা চাষে মহিলা ও বেকার যুবকসহ স্কুল-কলেজের ছাত্রদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ট্রাকযোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে এখানকার শসা। স্থানীয় বাজারের ক্রেতারা টাটকা ও তাজা শসা কিনতে পেরে খুশি।

রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় মাছের ঘেরের পাড়ে শসা চাষ লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় দিন দিন শসা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘেরের পাড়ে কম খরচে শসা চাষ করে লাভবান হওয়ার জন্য এ উপজেলার প্রতিটি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ চাষিদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। এ ছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে এবছর কৃষকেরা ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন। এতে কৃষকের মধ্যে ঘেরের পাড়ে শসা চাষে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। তারা আগামীতে মাছের ঘেরের পাড়ে আরো বেশি করে শসা চাষ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান জানান, শসায় থ্রিপস পোকা দমনের জন্য ডেনিম ফিট-৫০ ডাব্লিউজি (১০ লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম) বা টিডো-২০ এসএল, (১০ লিটার পানিতে ২.৫ মি.লি.) মাকড়ের জন্য ভারটিমেক-০১৮ ইসি (১০ লিটার পানিতে ১৫ মি.লি.) বা মিটিসেল- ৫ ই.সি. (১০ লিটার পানিতে ২০ মি.লি) আর ডাউনি মিলডিউ রোগ প্রতিকারের জন্য রিডোমিল গোল্ড এমজেড-৬৮ ডব্লিউজি (১০ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম) ব্যবহার করা হয়। বোরন ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য যথাক্রমে সলুবর বোরন (১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম) ও ম্যাগমা অথবা ম্যাগাভিট (হেক্টর প্রতি ১৫ কেজি) ব্যবহার করা হয়। আর খরা মোকাবিলায় ঘেরের পাশ থেকে শসা গাছে পানি সেচ দেওয়া হয়।