শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গোপীবাগ সিক্স মার্ডার মামলার চার্জশিট হয়নি ছয় বছরেও

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৪:০০

রাজধানীর গোপীবাগে কথিত পীর লুেফার রহমান ফারুকী ও তার ছেলেসহ ছয় জনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় চার্জশিট দেওয়া হয়নি ছয় বছরেও। এঘটনায় মামলা তদন্তকারী সংস্থা দুই জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। একজনের স্বীকারোক্তি মতে এখনো অধরা রয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) চার সদস্য।

মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, কথিত পীর খিজির খান হত্যার সঙ্গে জড়িত জেএমবির আট সদস্যের টিমের সঙ্গে গোপীবাগের সিক্স মার্ডারের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। খিজির খান হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত তরিকুল ইসলাম ও আবদুল গাফফার নামে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে তরিকুল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হাদিসুর রহমান সাগর ও মামুনুর রশিদ রিপন সিক্স মার্ডারের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এ কারণে সাগর ও রিপনকেও এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গোপীবাগের আর কে মিশন রোডে ৬৪/৬ নম্বর আয়না বাড়ির দোতলায় কথিত ইমাম মাহাদীর প্রধান সেনাপতি পরিচয় দানকারী লুেফার রহমান ফারুক, তার ছেলে মনির হোসেন, মুরিদ সাইদুর রহমান, মজিবর রহমান, রাসেল ও বাসার তত্ত্বাবধায়ক মঞ্জুর আলম ওরফে মঞ্জুকে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার প্রায় দুই বছর পর ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর হামলার দায় স্বীকার করে জেএমবির সদস্য তরিকুল ইসলাম। জেএমবির শীর্ষ নেতারাই এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন বলে তারিকুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নিহত লুেফার নিজেকে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি ও পীর দাবি করতেন। তিনি ও তার অনুসারীরা ধর্মের প্রচলিত রীতিনীতি ও অনুশাসনের বাইরে নিজস্ব ধর্মীয় মতবাদ প্রচারের চেষ্টা করতেন। ‘ধর্ম নিয়ে ভ্রান্তরীতি’ প্রচার করায় পুরোনো জেএমবির কিলিং স্কোয়াডের সদস্য জামাই ফারুকের পরিকল্পনায় এই হত্যার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় আট জন ।

ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, ক্লু-বিহীন সিক্স মার্ডার নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা শুরুর দিকে একেবারেই অন্ধকারে ছিলেন। ২০১৫ সালে বাড্ডায় বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও পীর খিজির হায়াত খান হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়েই মূলত সিক্স মার্ডারের রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। দুটি হত্যাকাণ্ড ও লুটপাটের ধরন প্রায় একই ছিল। এতে খিজির খান হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার তরিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সিক্স মার্ডারের বিষয়ে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। পরে তাকে সিক্স মার্ডার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গি গাফফারকে গ্রেফতার করা হয়। তরিকুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তরিকুলের জবানবন্দি অনুযায়ী, এই হত্যাকাণ্ডে আট জন অংশ নেয়। মাহফুজ, রনি, জাহিদ ও আতিক নামে চার জনের নাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করে সে। ঐ চার জন ছাড়া আরো কেউ হত্যায় জড়িত থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: মেয়র আইভীর মামলায় নারায়ণগঞ্জে উত্তেজনা

এ ব্যাপারে মামলার বাদী ও নিহত কথিত পীর লুেফার রহমানের ছেলে আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, খুনের ছয় বছর পার হতে চলল, আজও পুলিশ এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারল না। বাবাসহ অন্যদের কারা খুন করল জানতে পারলাম না। কী কারণে খুন করা হলো, তাও জানলাম না।

ইত্তেফাক/কেকে