শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আগুনে দুই পরিবারে কালো ছায়া

আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২০, ১৮:৩৪

আগুনের ঘটনা পরিবার দুইটিতে সারাজীবনের কালো ছাপ হয়ে থাকল। এদের মধ্যে রাজধানীর হাতিরপুলে বাসায় হ্যান্ড স্যানিটাইজারে আগুন ধরে দগ্ধ হওয়া চিকিৎসক দম্পতির স্বামী ডা. রাজিব ভট্টাচার্য সকাল সাড়ে ৮ টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালের আইসিইউতে  চিকিৎসাধীন  অবস্থায় মারা গেছেন। আগুনের ঘটনায় দগ্ধ তার স্ত্রী আনুষা ভট্টাচার্য একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দম্পতি দগ্ধ হলেও তাদের সাড়ে ৫ বছর বয়সী রাজশ্রী ভট্টাচার্য দগ্ধ হয়নি। 

অপরদিকে, বংশালে বাসায় গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২ সন্তানের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের বাবা জাবেদ হোসেন (৩৫) গতকাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এনিয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু হলো। শিশু দুটির মা শিউলি আক্তার (২৫) এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে।

না ফেরার দেশে ডা. রাজিব

২১ জুলাই রাতে হাতিরপুরের ভাড়া বাসায় একটি বোতল থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার অন্য বোতলের ভেতর ঢালছিলেন ডা. রাজিব ভট্টাচার্য। এসময় তার ঠোঁটে সিগারেট জ্বলছিল। তরল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বড় বোতল থেকে ছোট বোতলে ঢালার সময় রাজিবের মুখ থেকে জ্বলন্ত সিগারেট পড়ে যায়। অমনি দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। তার চিৎকারে স্ত্রী ডা. অনুসূয়া ভট্টাচার্য পাশের রুম থেকে ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এসময় অনুসূয়াও দগ্ধ হন। এই দম্পতির সাড়ে ৫ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে রাজশ্রী ভট্টাচার্য ঘটনার সময় কুমিল্লায় দাদার বাড়িতে ছিল।

তাদেরকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তির পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ডা. রাজিবের শরীরের ৩৭ ভাগ ও ডা. অনুসূয়ার ২০ ভাগ পুড়ে গেছে। কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার ইস্টো গ্রামের লক্ষ্ণণ ভট্টাচার্যেও ছেলে। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন। তার স্ত্রী শ্যামলী সেন্ট্রাল মেডিক্যাল চক্ষু বিভাগের  রেজিস্ট্রার।

ডা. রাজিবের মৃত্যুর বিষয়ে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, তাকে ভর্তি করার পর থেকেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সার্পোটে রাখা হয়। গত সাত দিন তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু ছেলেটা ফিরলো না।

তিনি আরও বলেন, একজন তরুণ চিকিৎসক এভাবে চলে গেলেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার। আমি আবারও বলছি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার  থেকে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। কারণ এটি অত্যন্ত এবং সাংঘাতিক দাহ্যপদার্থ। আগুনের কাছে যেন কোনোভাবেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার না থাকে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, বাসায়তো হ্যান্ড স্যানিটাইজার দরকার নাই, সাবান পানি দিয়ে হাত ধুলেই হয়ে যায়।

বংশালে বাবা না ফেরার দেশে

রাজধানীর বংশালে বাসায় গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২ সন্তানের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের বাবা জাবেদ হোসেন (৩৫) গতকাল সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু হলো। শিশু দুটির মা শিউলি আক্তার (২৫) এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বংশাল থানার ওসি মো. শাহীন ফকির জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে কসাইটুলি ৪৪/১ নম্বর শিমুলের ২তলা বাড়ির নিচ তলায় গ্যাস লাইল লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বাসাটির একপাশের দেয়াল ধসে পড়ে এর নিচে চাপা পড়ে জাবেদেও ছেলে মইনুল (৩) মারা যায়। আর দগ্ধ হয় শিশুটির বাবা, মা ও বড় বোন জান্নাত (৫)। তাদেরকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। গত শনিবার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাতের মৃত্যু হয়। গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় আইসিইউতে জাবেদের মৃত্যু হয়।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, জাবেদের ৩৭ শতাংশ দগ্ধ ছিলো। তার স্ত্রী ইনস্টিটিউটের ৭ম তলায় জেনারেল ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। তার ১৭শতাংশ হয়েছে। 

ইত্তেফাক/এএএম