শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত দেশের সাড়ে ৩ কোটি শিশু

আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২০, ০১:০৬

দেশে আনুমানিক কোটি ৫৫ লাখ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা পাঁচ মাইক্রোগ্রাম/ ডেসিলিটারের বেশি, যা ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।

 

বাংলাদেশে উন্মুক্ত বাতাসে এবং আবাসস্থলের কাছাকাছি এলাকায় ব্যবহূত সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারির অবৈধ পুনর্ব্যবহারকে সিসার সংস্পর্শে আসার একটি প্রধান উত্স হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি শিশু প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সিসার বিষক্রিয়ায় শিশুরা ব্যাপকহারে এবং আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব জুড়ে প্রতি তিন শিশুর এক জন বা প্রায় ৮০ কোটি শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম বা তার বেশি। অর্থাত্ এসব শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সম্প্রতি ৩০ জুলাই ইউনিসেফ পিওর আর্থ প্রকাশিত এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ধরনের প্রথম প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এসব শিশুর প্রায় অর্ধেকের বসবাস দক্ষিণ এশিয়ায়।চিলড্রেন্স এক্সপোজার টু লিড পলুশন আন্ডারমিন্স জেনারেশন অব পটেনশিয়ালশীর্ষক প্রতিবেদনটি শিশুদের সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া বিষয়ক হেলথ ম্যাট্রিক্স ইভালুয়েশনের করা একটি বিশ্লেষণ এবং এটি এনভায়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেকটিভসে প্রকাশের জন্য অনুমোদিত একটি গবেষণার মাধ্যমে যাচাই করা হয়।

 

 

 

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোজুমি বলেছেন, সিসার বিষক্রিয়া শিশুদের জীবনভর শিক্ষাগ্রহণে অসমর্থ করে তোলাসহ তাদের স্বাস্থ্য বিকাশের ওপর মারাত্মক দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে এবং এর কারণে বড় হওয়ার পর তাদের আয়ের সক্ষমতাও প্রভাবিত হয়। বিপজ্জনক ধাতব বর্জ্য সিসার দূষণ এবং এর কারণে শিশুদের ক্ষতিজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কাজ করবে ইউনিসেফ।

 

ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স ইভালুয়েশনের তথ্যানুসারে, সিসার বিষক্রিয়ায় বিশ্বে যেসব দেশে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি, সেদেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ এবং দেশের জনসংখ্যার প্রত্যেকের রক্তে সিসার উপস্থিতির গড় হার দশমিক ৮৩ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার, যা সর্বোচ্চ হারের দিক থেকে বিশ্বে ১১তম। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মসলায় উচ্চমাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। হলুদের মান নির্দেশক হিসেবে রং ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যবহূত লিড ক্রোমেট শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সমানভাবে রক্তে সিসার মাত্রা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিসার ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে আইকিউ হ্রাস পাওয়ায় অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হয়, তা দেশের জিডিপির দশমিক শতাংশের সমান। সিসার বিষক্রিয়া শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের সক্ষমতাকে ব্যাহত করে এবং জীবনে পাওয়া সুযোগগুলোর সর্বাধিক সুবিধা গ্রহণে তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

 

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, প্রথমদিকে অল্প কিছু লক্ষণ দেখা দিলেও সিসা নীরবে শিশুদের স্বাস্থ্য বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে মৃত্যুর মতো পরিণতিও ডেকে আনে।

 

প্রতিবেদনে পাঁচটি দেশের কেস স্টাডিতে বাংলাদেশের সাভারের কাঠগোরাসহ বিশ্বে আরো চারটি দেশে এই গবেষণা করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুদের পরবর্তী জীবনে কিডনি নষ্ট হওয়ার এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিসহ ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর শিশুদের মধ্যে সিসাজনিত বিষক্রিয়ায় প্রধান ভূমিকা রাখে সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারিগুলোর অনানুষ্ঠানিক নিম্নমানের পুনর্ব্যবহার। যা ২০০০ সালের পর থেকে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে তিন গুণ বেড়েছে।

 

পিওর আর্থেও প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ফুলার বলেন, সিসার বিপদ সম্পর্কে লোকজনকে অবহিত করতে হবে যাতে তারা নিজেদের এবং তাদের সন্তানদের রক্ষা করতে পারে।

 

ইত্তেফাক/ইউবি