শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্থায়ী কর্মচারী নেই, রোগীদের সেবা দিচ্ছে বহিরাগতরা

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০১৯, ০২:০৭

চিকিত্সা সেবার দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ঘটনা দুর্ঘটনা ছাড়াও নানা রোগ-ব্যাধি নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী ভর্তি হচ্ছে এ হাসপাতালে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সমপ্রসারিত ভবনের (ঢামেক-২) কর্মচারীদের কার্যক্রম চলছে বহিরাগতদের দিয়ে।

রোগী হাসপাতালে আসলে ভর্তি থেকে শুরু আনা নেয়ার সব ধরনের কাজ করছে এমন কিছু লোক, যারা হাসপাতালের কেউ না। ২০১৩ সালে সমপ্রসারিত ভবনটি চালু হলেও হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজ করতে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় রোগীর নিরাপত্তা রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে । 

জানা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিন দিন আশঙ্কাজনকহারে রোগী বাড়তে থাকে। এখানে বিছানা পাওয়া রোগীর জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু রোগী আসলে চিকিত্সাসেবা নিশ্চিত। একবিছানায় দুই/তিনজন, ওয়ার্ডের বারান্দায়, সিঁড়ির নিচে ও বাথ রুমের সামনে রোগীদের রাখা হয়। এই অবস্থায়ও রোগীরা পাচ্ছেন সুচিকিত্সা। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পরিস্থিতি দেখে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে সম্প্রসারণ করার নির্দেশ দেন। ছয়শত বেডের দশতলা বিশিষ্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-২ নির্মাণ করা হয়। এই নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মোট বেড ২৬শ’। প্রতিদিন ৩৫শ’ থেকে চার হাজার রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু সে তুলনায় হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবল নেই, কর্মচারীর মারাত্মক সংকট। দেশের চিকিত্সা সেবার সিংহভাগই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল।


সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালে জরুরি কোন রোগী আসলে ট্রলি প্রয়োজন হয়। কারণ সংকটাপন্ন রোগীরা হাঁটাচলা করার মতো অবস্থায় থাকে না। ভর্তির পর তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠনো কিংবা জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিভিন্ন বিভাগে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সেই ট্রলি বহন করার জন্য ১২০ জন কর্মী থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১২ জন। এক্ষেত্রে রোগীদের বহন করার কাজ করছে বহিরাগত কিছু লোক।

২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-২ চালু করেন। ছয়শ’ বেডের হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর সময় জরুরিভিত্তিতে ১৬৭ জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলার কারণে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। নিয়োগ বন্ধ থাকায় সমপ্রসারিত ভবনে বহিরাগত লোকদের দিয়েই রোগীদের আনা নেওয়া করা হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র ও রোগীর স্বজনরা জানান, বহিরাগতরা কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিংবা তারা কিসের ভিত্তিতে কাজ করে এ বিষয়গুলো দেখার কেউ নেই। তবে সূত্র বলছে, হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারীদের মনোনীত তারা। বহিরাগত লোকদের দিয়ে বাণিজ্য করছেন কিছু কর্মচারী নেতা।

আরো জানা গেছে, বহিরাগতদের মধ্যে অনেকেই ইয়াবাসহ নানা মাদকে আসক্ত। রোগীদের আনা নেয়ার কাজ করে পরে তারা স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে। বহিরাগতদের কারণে হাসপাতালে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। বহিরাগতদের কারণে অনেক সময় বিব্রত হচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। দেশে জঙ্গি হামলার হুমকিসহ নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। কেউ ইচ্ছা করে রোগীর ক্ষতি করলে তার দায়-দায়িত্ব কে নিবে?

ঢামেকের হাসপাতাল-২ তে মেডিসিন বিভাগের সকল সাব স্পেশালাইজ ইউনিটই রয়েছে। এর মধ্যে কিডনি, নিউরোলজি, হূদরোগ ও সিসিইউ ইউনিটসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ রয়েছে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট হাসপাতাল-২ তে নিয়মিত করা হয়।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিষয়টি জানে; কিন্তু এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয় না। তাদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ঢামেকের হাসপাতাল-২। মন্ত্রণালয় টেন্ডারবাজি, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ অন্য বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। হাসপাতালের মান উন্নত করার ক্ষেত্রে তাদের কোন মনোযোগ নেই।

এদিকে, দেশের সর্ববৃহত্ এই হাসপাতালে জনবল সংকটে কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, কয়েক দফা জনবল বাড়ানোর বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

আরও পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অম্লান দুই নাম

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, জনবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি শিগগিরই বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।

ইত্তেফাক/নূহু