বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কার প্রশ্রয়ে বেপরোয়া রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সম্পাদক নাঈম?

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:০৮

কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ চুরি করে বিক্রি, মাদকসেবন ও কারবারেও পটু তিনি। সংগঠনের ভেতরে-বাইরের যাকে-তাকে, যখন-তখন পেটানো ও চাঁদাবাজিই যেনো তার কাজ। এ জন্য পাশের সিটি কলেজের হোস্টেলের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে টর্চার সেল। তার বাহিনীর নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি সাংবাদিকরাও।

জানা যায়, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের আগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক থেকেই নাঈম বেপরোয়া। তার হাতে নির্যাতিত অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী। সংগঠনের প্রভাবে রাজশাহী কলেজ কব্জায় রেখেছেন। কলেজের সবকাজে তার পোষ্য বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও বিব্রত শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, তিনটি হোস্টেলের সাতটি ব্লকে প্রতিবছর ৫৫-৬০টি আসন ফাঁকা হয়। ফাঁকা আসনে শিক্ষার্থী উঠতে কলেজ ছাত্রলীগের সুপারিশ প্রয়োজন। এ সুযোগে ছাত্রলীগ প্রত্যেক শিক্ষার্থী থেকে ন্যূনতম ৪/৫ হাজার টাকা চাঁদা উঠায়। এ চাঁদা আদায়ের নেতৃত্বে থাকে নাঈম। 

একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘নাঈমকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে হোস্টেলে উঠেছি। মাঝেমধ্যেই তার নামে দু-একশ করে টাকা দিতে হয়।

ভুক্তভোগীরা বলেন, চাঁদা না দিলে বা মিছিলে না গেলে শিবির আখ্যা দিয়ে পেটানো হয়। এদিকে করমর্দন না করা, মিছিলে না যাওয়া, মিছিলে স্লোগান ধরতে বিলম্ব ইত্যাদি কারণে শিক্ষার্থীসহ কর্মীদের পেটানোর অভিযোগ আছে নাঈমের বিরুদ্ধে। 

কলেজের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষক বলেন, রাজশাহী কলেজে ছাত্র সংগঠনে তেমন ঝামেলা নেই। তবে ছাত্রলীগের নাঈম প্রায়ই নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। তার দাপটে সবাই অস্থির। 

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি মোহনপুরের ছাত্রলীগ কর্মী আমজাদ হোসেনকে নাঈমের অনুসারীরা অপহরণ করে। ভুক্তভোগী আমজাদ বলেন, নগরীর সাহেব বাজার থেকে নাঈমের নেতৃত্বে রকি, আশরাফুল, শরিফুল, রায়হান ও রতনসহ কয়েকজন তাকে সিটি কলেজ হোস্টেলের দোতলায় নিয়ে লাঠি ও লোহার পাইপ দিয়ে পেটায়। এসময় তার বাড়িতে ফোন করে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে নাঈম। এদিকে চাঁদা দাবির পর আমজাদের স্ত্রী জেসমিন পুলিশে অভিযোগ করলে তাকে মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সামনে থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় সোহাগ নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক কর হয়।  

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য পঞ্চম চালানে ত্রাণ পাঠালো ভারত

অভিযোগ উঠেছে, নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের চাচাতো ভাই এবং নগর আওয়ামী লীগের এক ‘টেন্ডারবাজ’ নেতার আত্মীয় নাইমুল হাসান নাঈমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করে নাঈম বাহিনীর সদস্যরা। এতে রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল্লাহ মিম, বাবর মাহমুদ ও মোফাজ্জ্বল বিদ্যুৎ আহত হন। 

রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, বহু অপকর্মের নায়ক নাঈমের কারণে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তার ব্যাপারে দলের উচ্চমহলের সিদ্ধান্ত জরুরি। 

মতামতের জন্য নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ রাজিব ও রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়ামকে পাওয়া যায়নি। তবে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, নাঈমকে গ্রেফতারের কথা শুনেছেন। তবে চাঁদাবাজি ও কোচিং সেন্টারে হামলার তদন্ত হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ৩ এপ্রিল ২০১৮ নাঈমকে বহিষ্কার করেছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। 

ইত্তেফাক/এসি