শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঋণের টাকা শেষ, আইসিইউ থেকে ফেরত ইবি শিক্ষার্থী

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৯, ২০:৪০

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১৮ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন ইবি শিক্ষার্থী সেলিম হোসেন। হাসপাতালে আসবার আগে সেলিমের মা কোনো এক গৃহস্থের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঋন করেছিলেন। সেই টাকায় চিকিৎসা চলেছ মাত্র দুই দিন। তৃতীয় দিন সেলিমকে নিয়ে আসা হয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। চিকিৎসকরা বলছেন, সেলিম বিরল গুলেন বারি সিনড্রোমে (Guillain–Barré syndrome) আক্রান্ত।

সেলিম কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ১৯তম ব্যাচের ছাত্র। সে ১৬ দিন ধরে হাসপাতালের এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। 

সেলিমের বাড়ি পুঠিয়া উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামে। বাবা  লুৎফর রহমান একজন দিনমজুর। স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পাস এবং কৃতিত্বের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে জায়গা করে নেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

একমাত্র ছেলের চোখে আগামীর স্বপ্ন বুনছিলেন মা নূরনাহার। স্বামীর উপার্জনে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালানো ছিল কষ্টসাধ্য।তাই গরু-ছাগল পালন করে সেখান থেকে টাকার জোগান দিতেন মা। ছেলের অসুস্থতায় মায়ের সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে। 

সেলিম হোসেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ১০৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। বন্ধু শাওন খন্দকার জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু সেলিম হাসপাতালে।  বিভাগের শিক্ষক-সহপাঠীরা নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন। তার চিকিৎসায় সাধ্যমত সহায়তা করছেন। এখন প্রয়োজন বড় কিছু অনুদান।

সেলিমের মা জানান, কিছুদিন হলো সেলিম অসুস্থ। সামর্থ্য অনুযায়ী একমাত্র ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার চিকিৎসায় অন্তত ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। এ খরচ জোগানোর সামর্থ্য তাদের নেই। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সকলের সহায়তা চান অসহায় এ মা।

ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সমাজের বৃত্তবান ও হৃদয়বানদের সহায়তা চেয়ে মা বলেন, ১৮ মার্চ সংকটাপন্ন অবস্থায় সেলিমকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। দুই দিনে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

এই দুদিনে তার কিছুটা উন্নতিও হয়েছে। চিকিৎসক আরও তিন-চারদিন রাখতে চাইছিলেন। কিন্তু টাকা না থাকায় অনুরোধ করে আবারও ওয়ার্ডে ফিরিয়ে আনেন। 

৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন সেলিম হোসেন। উঠে বসা তো দূরের কথা, নড়াচড়া করতে পারছেন না। তিনি জানান, শরীরের বাম পাশ পুরোপুরি অবশ। মেরুদণ্ডের জয়েন্টে ব্যথা। ফুলে গেছে পুরো শরীর। সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

রাজশাহী হাসপাতালের নিউরো মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান কফিল উদ্দীনের অধীনে সেলিম উদ্দিনের চিকিৎসা চলছে । তবে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও তার রোগ নির্ণয় করা যায়নি। সর্বশেষ রক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে সময় লাগবে আরও ১০ দিন। সেটি হাতে পেলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে তার শরীরে কোন রোগ বাসা বেঁধেছে। আপাতত লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা চলছে তার।

চিকিৎসকদের ধারণা, তিনি গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত। এটি একধরনের প্যারালাইসিস। এটি প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণকারী অ্যাকিউট বা তীব্র পলিনিউরোপ্যাথি রোগ। এতে হাত-পা খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। অনুভূতিতে ভিন্নতা কিংবা ব্যথার পর হাতে এবং পায়ে দুর্বলতা দেখা যায় যা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন: নিজের বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করলো কিশোরী

রোগ খুব তীব্র হলে প্রাণঘাতী হতে পারে, তখন কৃত্রিমভাবে শ্বাসকার্য চালানোর জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রে ডিসঅটোনমিয়া হলে হৃদ স্পন্দন ও রক্তচাপে গোলযোগ দেখা যায়। বিরল এই রোগ প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে এক-দুজন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

ইত্তেফাক/অনি