মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনায় চাই নিরাপদ ও বিকল্প বাহন 

আপডেট : ২৩ জুন ২০২০, ১৫:৩৯

দিলশাদ রহমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তিনি ধানমন্ডি থেকে গুলশানে গিয়ে অফিস করেন। দেশে করোনার প্রভাব শুরুর সময় লকডাউনে অনেকের মতো তাকে অফিস যেতে হয়নি। তবে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পেশাজীবীদের মতো তিনিও প্রতিদিন অফিস করছেন।

ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য তাকে ট্যাক্সি বা সিএনজি ভাড়া করে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে, ফলে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যই বাধ্য হয়ে এই বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে তাকে। নিত্যদিনের এই চিত্রটা শুধু দিলশাদ রহমানকেই ফেইস করতে হচ্ছে, তা নয়। বরং এই চিত্র সারা দেশের কর্মজীবী মানুষের জন্য একই রকম। 

করোনা ভাইরাসের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। গণপরিবহন ব্যবহারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শারীরিক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম-নির্দেশনা দিয়েছে। দৈনন্দিন প্রয়োজনে বা অফিসে যেতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিরাপদ যানবাহন এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যাত্রীরা গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় পরস্পর থেকে প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখতে না পারলে ঝুঁকির মুখে পড়বেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি এমনকি নিঃশ্বাস ত্যাগের মাধ্যমেও ওই ব্যক্তির মুখ থেকে ভাইরাসের ছোট ছোট বিন্দু বা অনুকোষ আশেপাশে ছড়ায়। এই বিন্দুগুলো প্রত্যক্ষভাবে একজন থেকে আরেকজনের শরীরের ছড়ায় চোখ, নাক, মুখ বা সরাসরি কাউকে স্পর্শের মাধ্যমে ঝুঁকি বাড়ায়। আবার দেখা যায়, অনেক সময় গণপরিবহনগুলোতে যাত্রী এবং কন্ডাক্টর, টিকেট বিক্রেতা, হেলপারসহ সকল কর্মীদের জন্য যথাযথ স্যানিটাইজেশন ও জীবাণুমুক্তকরণ ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হলেও আমাদের মতো দেশে এসব মেনে চলা সত্যিই খুব কঠিন।

আরো পড়ুন: খুলনায় করোনা উপসর্গে আরো এক নারীর মৃত্যু

আমাদের দেশে গণপরিবহনগুলোতে বেশির ভাগ যাত্রীই শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যাপারটিতে সচেতন নয়। তাছাড়া কিছু কিছু বাসে দাঁড় করিয়েও যাত্রী নেওয়া হয়। প্রচুর লোকজন বাসে কাছাকাছি চলে আসে। তাছাড়া বাসের সুপারভাইজার হেলপাররাও বাসের ভিতরে চলাচলের সময় অসচেতনভাবে শরীরে স্পর্শ করে। সেইসাথে বাসগুলোতে জীবাণুনাশেরও তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ফলে এই ধরনের চলাচলে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়। এরই মধ্যে গণপরিবহনে যাত্রীদের নতুন ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তাই কর্মজীবীদের নিজের নিরাপত্তা এবং যাতায়াত খরচ কমানোর জন্য বিকল্প বাহনের সন্ধান করতে হচ্ছে। 

চলাচলের জন্য গণপরিবহন ব্যবহার করার থেকে ব্যক্তিগত বাহন যেমন-প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, স্কুটার ও সাইকেল ব্যবহারের ব্যাপারে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। প্রাইভেট কার নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য-এর দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও সাশ্রয়ী নয়। অপরদিকে সাইকেল আর্থিকভাবে সবচেয়ে সাশ্রয়ী হলেও দীর্ঘ দূরত্ব বা অফিসে  যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে আদর্শ পরিবহন নয়। এই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে  নিরাপত্তা,  স্বাচ্ছন্দ্য ও সাশ্রয়ী এই তিন এর সবচেয়ে ভালো মিশ্রণ হিসেবে অনেকেই মোটরসাইকেল ও স্কুটারকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। 

বিবিসির এক সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ইংল্যান্ডে ভ্রমণের সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজে ফিরে আসতে সকলকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। গণপরিবহন পরিহার করে তাদের পায়ে হেঁটে, মোটরসাইকেলে, বাইসাইকেলে বা নিজে গাড়ি চালিয়ে যাতায়াত করা উচিত। যাত্রীদের ব্যক্তিগত সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি মোটরসাইকেল, স্কুটার, বাইসাইকেল এবং ব্যক্তিগত বাহনের প্রতি নির্ভরশীল হওয়ার জন্য।

অনেকের মনে হতে পারে, মোটরসাইকেল কেনা অনেক খরচসাপেক্ষ ব্যাপার কিন্তু বাস্তবতা হলো-একটা মোটরসাইকেল দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যায়, ফলে সুবিধা অনেক বেশি। কারণ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়াতো যায়ই, আবার চাইলে কয়েক বছর পরে ভালো দামে বিক্রিও করা যায়। করোনার এই সময়ে নিজের সুরক্ষায় দৈনন্দিন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও সময় সাশ্রয়ে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেলটি হয়ে উঠতে পারে আপনার নিত্যকার সঙ্গী। 

ইত্তেফাক/এএএম


 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন