বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চার টাকার পেঁয়াজ ২৫ টাকা

আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:১৪

রাজধানী ঢাকা থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ২৮০ কিলোমিটার। ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ হিলিতে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে চার থেকে পাঁচ টাকা। আর সে  পেঁয়াজ রাজধানীর বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৫ টাকায়। পরিবহন ব্যয়সহ যোগ করলেও প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম এতটা হবার কথা নয়। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো শুল্কও নেই।

দেশের বিভিন্ন বাজারে এখন পেঁয়াজের ব্যাপক সরবরাহ। একদিকে রবি মৌসুমের স্থানীয় জাতের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে অন্যদিকে ভারত থেকেও প্রচুর পরিমাণে পণ্যটি আমদানি হচ্ছে। ফলে পাইকারিতে পেঁয়াজের বাজারে ধস নেমেছে। তবে পাইকারিতে দাম কমলেও রাজধানীর বাজারে এখনো বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন আড়ত ঘুরে দেখা যায়, ৩ থেকে ৪ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে একটু বেশি দামে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ভারতে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের উত্পাদন বেড়েছে। ফলে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এছাড়া দেশের বাজারে স্থানীয় জাতের পেঁয়াজের পাশাপাশি মুড়িকাটা পেঁয়াজও উঠেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।

হিলি বন্দরের বেসরকারি ওয়্যারহাউজ পানামা পোর্ট সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের সময় থেকে গত এক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত প্রতিদিন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৪০টির (এক হাজার মেট্রিক টন) মতো ট্রাকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাত্ করেই দাম কমে যাওয়ায় আমদানিও কমে গেছে। বর্তমানে এই বন্দরের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি ট্রাকে (পাঁচ’শ মেট্রিক টন) পেঁয়াজ আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন জানান, ভারতে পেঁয়াজের উত্পাদন বেশি হয়েছে। আবার স্থানীয় বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহও ভালো। একারণে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম অনেক কমছে। তিনি জানান, ভারত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪ থেকে ৫ টাকা দামে কিনতে হয়। এরপর দেশে আনতে ট্রাক ভাড়াসহ অন্যান্য আমদানি খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে সাত থেকে আট টাকা। কিন্তু এই পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে ৭ থেকে ৮ টাকায়। আবার অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

বর্তমানে বন্দরের ভেতরে আমদানিকৃত ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ পাইকারিতে (ট্রাকসেল) বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৪ থেকে ৬ টাকায়। আর নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে     কেজিপ্রতি ৮ টাকায়।

স্থানীয় পাইকার আইয়ুব আলী জানান, আমদানিকারকেরা বেশি লোকসানের কারণে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। তারা ভালো মানের পেঁয়াজ বাছাই করে রেখে দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার বন্দরের অনেক ব্যবসায়ীর কাছে পেঁয়াজ কিনতে গেলে তারা ৯ টাকার নিচে পেঁয়াজ বিক্রি করবেন না বলে জানিয়েছেন। তাই তিনি পেঁয়াজ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পারেননি।

এদিকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা কম থাকায় কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া ভোক্তারা এখনো বেশি দামে পেঁয়াজ কিনছেন। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র হিসেবে বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। তবে বাস্তবে আরো বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেটে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২২ থেকে ২৫ টাকায়।

এ প্রসঙ্গে এই বাজারের বিক্রেতা আনিস বলেন, মোকামে পেঁয়াজের দাম কম থাকলেও রাজধানীর বাজারে এত কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি সম্ভব নয়। কারণ, মোকাম থেকে পাইকাররা কেনার পর আমরা তাদের কাছ থেকে কিনি। এছাড়া পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ক্রয়মূল্য বেশি পড়ে যায়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজের দাম অনেক কম বলে তিনি জানান। গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায়। খুব শিগগির পেঁয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উত্পাদিত হয় ১৬ লাখ মেট্রিক টনের মতো। বাকি পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই আমদানি হয় ভারত থেকে।