শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার 'খ্রীষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতাল'-এ ভুল চিকিৎসা বাড়ছেই

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:৫৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার 'খ্রীষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে' ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন পাপিয়া নামের আরও এক রোগী। আদালতে দায়ের করা মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আদালতের নির্দেশে জেলার সিভিল সার্জনের গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের তদন্ত করে ১২ জানুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

শুধু ভুল চিকিৎসা নয়, হাসপাতালের চিকিৎসকরা অবৈধভাবে বিভিন্ন ডিগ্রী ব্যবহার করছেন বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। হাসপাতালটিতে সার্বক্ষণিক বিশেষষ্ণ চিকিৎসক এবং অন্য আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা না থাকার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর আগে স্কুল শিক্ষিকা নওশীন আহমেদ দিয়াকে (২৯) ভুল চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োগে মৃত্যু ঘটনার অভিযোগে হাসপাতালটির পরিচালক ডাক্তার ডিউক চৌধুরী ও তার হাসপাতালে কর্মরত দুই চিকিৎসক অরুনেশ্বর পাল অভি ও মো: শাহাদাত হোসেন রাসেল ১ জানুয়ারি জেলে যান।

পাপিয়াকে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে তার পিতা আবুল খায়েরের মামলায় ডা. ডিউক চৌধুরী, হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এঞ্জেলা চৌধুরী, ডা. অরুনেশ্বর পাল ও ডা.তনুশ্রী রায়কে আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে জেলার সিভিল সার্জন ৫ ডিসেম্বর ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাসুম ইফতেখারকে প্রধান করে অন্য সদস্যরা হচ্ছেন ডা. ফৌজিয়া আখতার, ডা. মোঃ মাহমুদুল হাছান, সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী মোঃ জাহিদুল হক। তদন্ত কমিটি ১৭ ডিসেম্বর তদন্ত কার্য্যক্রম সম্পন্ন করে।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় রোগীর (পাপিয়া) আলট্রাসনোগ্রামে সঠিক প্রতিবেদন না আসার ফলে রোগীর রোগ নির্ণয় সঠিকভাবে হয়নি। ফলে পরবর্তী জটিলতার সৃষ্টি হয়। এইরূপ জটিল ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ সনোলজিস্ট দিয়ে দ্বিতীয়বার আলট্রাসনোগ্রাম করার পর চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা উচিত ছিলো বলে একমত পোষণ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

প্রতিবেদন বলা হয়, ২০১৯ সালের ২মার্চ রোগীকে যখন খ্রীষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে আনা হয় তখন রোগীকে ভর্তি করা হয়নি। ডিএন্ডসি অপারেশন নোটে ডাক্তার এমএ মজিদের নাম দেখা যায় কিন্তু তার কোনো ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র ডাক্তার অরুনেশ্বর পালের ব্যবস্থাপত্র দেখা যায়। 

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এমন আধুনিক হাসপাতালে ইমার্জেন্সি অপারেশনের জন্যে সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ আনুসঙ্গিক কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের চিকিৎসকগণ এমবিবিএস ডিগ্রীর পর যেসকল ডিগ্রী ব্যবহার করছেন তা বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অনুসারে বৈধ নয়। এর আগে নবীনগরের জালশুকা গ্রামের মোঃ আবুল খায়ের তার মেয়ে পাপিয়ার ভুল চিকিৎসার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, দেড় মাসের অন্তসত্বা অবস্থায় পাপিয়ার তলপেটে প্রচণ্ড ব্যাথা হলে খ্রীষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পাপিয়ার ডিএনসি করার পরামর্শ দেন এবং ৫ হাজার ৮০০ টাকা ফি নেন। পাপিয়া ও তার স্বজনদের আপত্তির পরও ডিএনসি করেন তারা। কিন্তু ডিএনসি করার সময় তার জরায়ুর রক্তনালী কেটে ফেলা হয়। বাসায় নেওয়ার পরপরই প্রচণ্ড ব্যাথা ও রক্তপাত শুরু হয়।

পুনরায় ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর পাপিয়ার জটিল অপারেশন করা হয়। ১২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। জীবন বাচঁলেও স্বাভাবিক চলাফেরা করার সক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: কলকাতায় চলে যাওয়া ৩টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চট্টগ্রাম ফিরেছে

সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহআলম জানান, পাপিয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা হলে আদালত এ বিষয়ে তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এরপর তিনি ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেন। তদন্ত কমটির দেওয়া প্রতিবেদন ১২ জানুয়ারি আদালতে জমা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১লা জুন ভুল চিকিৎসায় পারভীন বেগম (২৮) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয় ডিউকের হাসপাতালে।

ইত্তেফাক/নূহু