শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মিতুর পরকীয়ার ছবি ভাইরাল, তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে তদন্ত

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:১৭

২০০৯ সালে তানজিলা চৌধুরী মিতুর সঙ্গে ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সবশেষ ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন। কিন্তু সেই ভালোবাসার সম্পর্ক শেষ হয় মর্মান্তিক ঘটনায়।

গত বৃহস্পতিবার ভোরে আত্মহত্যা করেন ডা. আকাশ। আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে নিজের স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ এনে পোস্ট দেন। পোস্টের সঙ্গে স্ত্রীর পরকীয়ার গোপন মুহূর্তের আপত্তিকর কিছু ছবি ও এসএমএসের স্ক্রিন শট দেন। এছাড়া আত্মহত্যার জন্য নিজের স্ত্রীকে দায়ী করেন। পাশাপাশি দায়ী করেন শ্বশুর শাশুড়িকে। ইতোমধ্যে সেই সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসায় ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শরীরে শিরায় বিষ প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেন আকাশ। আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক ও প্রতারণার অভিযোগ করে যান। এর প্রমাণ হিসেবে মিতুর সঙ্গে তার বন্ধুদের বেশ কিছু ছবি দিয়ে যান।

আরো পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেতে আপন ভাইবোনের বিয়ে

পুলিশ বলছে, আকাশের সঙ্গে বিয়ের পরপরই মিতু যুক্তরাষ্ট্র চলে যান। তখন থেকেই বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। কিন্তু গত ১৩ জানুয়ারি মিতু দেশের আসার পর তা আরও বেড়ে যায়। বুধবার রাতে এ নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। এরপর রাত ৪টার দিকে মিতু তার বাবার বাড়িতে চলে যান। মিতু চলে যাওয়ার ভোরে আত্মহত্যা করেন ডা. আকাশ।

পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, আকাশ তার পোস্টে মিতুর যেসব বন্ধুর নাম বলে গেছেন, তাদের বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

এদিকে এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে আকাশের স্ত্রী মিতু ও শ্বশুর, শাশুড়িসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে মিতুকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

মামলার এজাহারে বলা হয়, বিয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে আসা যাওয়ার মধ্যে ছিলেন মিতু। বিয়ের আগে ও পরে তিনি আসামি প্যাটেল ও মাহাবুবের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখেন। কিন্তু আকাশ মিতুকে বারবার শোধরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে অন্য আসামিদের চাপে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

এই ছবিগুলো নিজের ফেসবুকে দিয়ে যান ডা. আকাশ। 

ডা. আকাশ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমার সঙ্গে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর ২০০৯ সাল থেকে পরিচয়। প্রচণ্ড ভালবাসি ওকে। ও নিজেও আমাকে অনেক ভালবাসে। আমরা ঘুরে বেড়াই, প্রেম করে বেড়াই। আমাদের ভালবাসা কম বেশি সবাই জানে। অনেকে বউ পাগলাও ডাকত।…আমিতো বেঁচে থেকেও মৃত হয়ে গেলাম। তারপর ক্ষমা চাইল শবে কদরের রাতে, কান্না করে পা ধরে আর কখনো এমন হবে না। আমিও ক্ষমা করে দিয়ে ১ বছর ভালভাবেই সংসার করলাম। তারপর ও দেশের বাইরে আমেরিকা গেল। মাঝখানে একবার ঈদ পালন করতে আসল, সেপ্টেম্বরে ২০১৮ আবার চলে গেল ইউএসএমএলই এর প্রিপারেশন নিচ্ছিল সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে ২০১৯ এ আমার ইউএসএ যাওয়ার কথা।…আমি বারবার বলছি আমাকে ভাল না লাগলে ছেড়ে দাও কিন্তু চিট কর না মিথ্যা বল না।’

আরো পড়ুন: একতা কাপুরের পিতাহীন নবজাতকটি দেখতে নানার মতো

‘আমার ভালবাসা সবসময় ওর জন্য ১০০% ছিল। আমি আর সহ্য করতে পারিনি। আমাদের দেশে তো ভালবাসায় চিটিং এর শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম আর আমি চির শান্তির পথ বেছে নিলাম। তোমাদেরও বলছি কাউকে আর ভাল না লাগলে সুন্দরভাবে আলাদা হয়ে যাও চিট কর না মিথ্যা বল না। আমি জানি অনেকে বিশ্বাস করবে না এত অমায়িক মেয়ে আমিও এসব দেখে ভালবেসেছিলাম। ভিতর বাহির যদি এক হত। সবাই আমার দোষ দিবে সবকিছুর জন্য তাই ব্যাখ্যা করলাম।…ও মা তুমি মাফ করে দিও তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না। মায়ের ভালবাসার কখনো তুলনা চলে না।…’

আকাশ চন্দনাইশ উপজেলার বরকল বাংলাবাজার এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী মিতু একজন চিকিৎসক।

ইত্তেফাক/জেডএইচ