মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শ্রীপুরে স্পিনিং মিলে অগ্নিকাণ্ড: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬

আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৯, ১৪:২৪

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার অটো স্পিনিং লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ জনে। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটা ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার একটি, বুধবার ভোর ৪টার দিকে তিনটি ও দুপুরে পাওয়া যায় আরও দুইটি মরদেহ।

জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে উপজেলার নয়নপুরের ফরিদপুর এলাকার একটি স্পিনিং মিলের তুলার গুদামে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৮টি ইউনিট। প্রায় ১১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে তারা। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে ডাম্পিং শুরু করে।

মঙ্গলবার দুপুরের এই অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার টয়লেটে আটকা পড়েন এক নিরাপত্তাকর্মী। ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর বিকালে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার আলাউদ্দিনের ছেলে রাসেল মিয়া (৪৫)। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর বুধবার ভোর ৪টার দিকে কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। তারা হলেন উপজেলার দক্ষিণ দুয়ার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৮), হাসান আলীর ছেলে মো. শাহ জালাল (২৮) এবং কালিয়াকৈরের ভান্নারা মৌচাক এলাকার শামসুল হকের ছেলে সেলিম মিয়া (৩৫)।

এরপর বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডাম্পিংয়ের কাজের মধ্যেই কারখানার এসি প্ল্যান্ট থেকে আরও দুইটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন, পাবনা জেলার আমিনপুরের নান্দিয়ারা গ্রামের কেরামত সরদারের ছেলে সুজন সরদার (৩০) এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ভুবনপোড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. আবু রায়হান (৩৫)। নিহত দুইজনই কারখানার এসি প্ল্যান্টে কাজ করতেন।

আরও পড়ুন:  স্পাইসজেটের প্রথম ফ্লাইটে আসাম প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর

মঙ্গলবার বিকালে এক নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু ও বুধবার ভোরে উদ্ধারকৃত তিন মরদেহের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, 'মঙ্গলবার দুপুরে ওই কারখানায় আগুন লাগার পর টয়লেটে আটকা পড়া এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তিনজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। সেগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।'

শ্রীপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা রাম প্রসাদ পাল জানান, রাসেল (৩৫) নামে এক নিরাপত্তাকর্মী অগ্নিকাণ্ডের সময় গুদামের ভেতরে টয়লেটে আটকা পড়েন। ধোঁয়া  ও আগুনের মধ্যে চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু বিকালে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনের কারণ খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীনুর ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি  গঠিত ওই কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের উপ-পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক এবং গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ- সহকারী পরিচালক এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন।

এছাড়াও জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি