শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নির্বাচনে বিপর্যয়ে কংগ্রেসে তোলপাড়

আপডেট : ২৬ মে ২০১৯, ০৮:৪২

লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বিরোধীদল কংগ্রেসে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যর্থতার দায় নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটি তা নাকচ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে দলের অভ্যন্তরে পরিবর্তন আনার পক্ষে মত দিয়েছেন নেতারা।

লোকসভা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে গতকাল শনিবার দিল্লিতে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, মনমোহন সিংহ-সহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে দলের ভরাডুবির জন্য নিজের দায় স্বীকার করে নিয়ে বৈঠকে সকলের কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রাহুল।

তখন সর্বসম্মতভাবে কংগ্রেসের পক্ষ তা খারিজ করে দেওয়া হয়। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, রাহুল গান্ধী পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু তা সরাসরি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসকে ঢেলে সাজানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে।

এর আগে শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি রাজ বাব্বার, কর্নাটকের কংপ্রেসের প্রচারণা কমিটির প্রধান এইচ কে পাতিল এবং ওড়িশায় কংগ্রেস সভাপতি নীরাঞ্জন পট্টনায়েক পদত্যাগ করেছেন। সামনের দিনগুলোতে আরো কয়েকটি রাজ্যের নেতারা পদত্যাগ করতে পারেন। গতকালও কার্যনির্বাহী বৈঠকে বিভিন্ন রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতিরা পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে পদত্যাগের প্রস্তাব দেন।

দলীয় সূত্র বলছে, বৈঠকে কংগ্রেসের পুনরুত্থানে রাজ্যে রাজ্যে ভালো নেতা তৈরির পাশাপাশি গান্ধী পরিবারের বাইরে থেকে দলের শীর্ষ পদে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৪টি আসন। গতবারের তুলনায় এবার আরো ৮টি আসনে জয় পেয়েছে দলটি। দেশজুড়ে যে মোদি বিরোধী ঝড় তুলতে চেয়েছিলেন রাহুল, সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে মোদি-শাহের কৌশলের কাছে। গতবারের চেয়ে আরো ২১টি আসনে বেশি জিতেছে বিজেপি। মোদি ম্যাজিকের কাছে পুরোপুরি ফ্লপ রাহুলের ‘চৈকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাহুল পদত্যাগ করবেন কি না সেটা যেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কংগ্রেসের কাছে তেমনই গুরুত্বপূর্ণ এবারের ভোটে বিপর্যয়ের কারণ খোঁজার বিষয়টা। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসহ ১৭টি রাজ্যে একটি আসনও পায়নি কংগ্রেস। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল যে, ছত্তিশগড়, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে বিধানসভার জয় কংগ্রেসকে লোকসভা নির্বাচনে লড়ার বাড়তি শক্তি জুগিয়েছিল, কিন্তু সেই তিন রাজ্যেই মোদি ঝড়ে উড়ে গেছে রাহুলের ক্যারিশমা। ছত্তীসগড়ে ২টি, মধ্যপ্রদেশে ১টি আসন পেয়েছে দলটি। আর রাজস্থানে তো কোনো আসনই পায়নি কংগ্রেস।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, উত্তরপ্রদেশে ভোট ধরে রাখতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নামানো হয়েছিলো। কিন্তু তিনিও সেখানে ব্যর্থ হয়েছেন। রাহুল নিজেও হেরেছেন কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আমেথিতে। কেরালার ওয়েনাদে রাহুলের জয় ছিল কংগ্রেসের এই বিপর্যয়ের মধ্যে একমাত্র ‘সান্ত্বনা’! গতকাল বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে কংগ্রেস নেতারা ভোটারদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। দলটির দাবি, তারা সব সময় শোষিত, বঞ্চিতদের হয়ে লড়াই করেছেন। এই লড়াই অব্যাহত থাকবে।

ইত্তেফাক/এসআর