দ্যা আর্থ সোসাইটির আয়োজনে এবং ডাইভারসিটি ফর পিস ও ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দুইদিনব্যাপী পিস হ্যাকাথন। গত ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল মাধ্যমে পিস অ্যাম্বাসেডরদের নিয়ে দুদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের কর্মসূচি মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। পিস হ্যাকাথনের শুরুতে প্রথমেই সেশন স্পিকাররা তাদের বক্তব্য রাখেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশের উইমেনস ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট স্পেশালিষ্ট শারমিন ইসলাম তার বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মহিলাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরেন। তাছাড়া, আমাদের সমাজে বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে সে বিষয়টিও তুলে ধরেন। এরপর, ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশনস মো. আব্দুল কাইয়ুম তার বক্তব্যের মাধ্যমে কিভাবে আমরা শান্তিপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যমে সমাজের সকল বৈচিত্র্যকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে পারি সে বিষয়টি ব্যক্ত করেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিটিসি) বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম তার বক্তব্যের মাধ্যমে মূলত শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে কিভাবে সন্ত্রাসবাদকে দমন করতে পারি সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
সবশেষে, ইউএনডিপি বাংলাদেশের পিটিআইবি প্রজেক্ট অফিসার রেবেকা সুলতানা পিস অ্যাম্বাসেডরদের উদ্দেশ্যে কীভাবে তারা তাদের চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সমাজের সকল বৈচিত্র্যকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
সেশন স্পিকারদের বক্তব্যের পর পরই পিস অ্যাম্বাসেডররা অনলাইনের মাধ্যমে ১১টি দলে বিভক্ত হয়ে তাদের প্রথম দিনের কার্যক্রম শুরু করেন। এইদিন তারা মূলতও আমাদের সমাজের বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী তাদের মাঝে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলো খুঁজে বের করেন।
দ্বিতীয় দিনও দুটি পর্বে পিস হ্যাকাথন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেখানে প্রথমেই, পিস অ্যাম্বাসেডররা মেধা ও উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধান প্রদান করেন। প্রায় দুইদিনব্যাপী এ কার্যক্রমে পিস অ্যাম্বাসেডরদের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক প্রতিটি দলে একজন করে মডারেটর তাদের সহযোগিতা করেন। যার ফলে, পিস অ্যাম্বাসেডররা মডারেটরদের কাছ থেকে শুধু মাত্র দিক নির্দেশনাই নয় বরং কিভাবে তারা বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের প্রস্তাবিত সমাধানের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারে সে সম্পর্কিত জ্ঞানও লাভ করেন। মডারেটরদের দায়িত্বে ছিলেন- সিদ্ধার্থ গোস্বামী, হাবিবুর রহমান পাটোয়ারী, ফারহান হৃদয়, রুবিনা ইয়াছমিন, আসাদ খান, রোকনুজ্জামান সজল, অরূপ বড়ুয়া, সারিত কাইয়ুম তালুকদার, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাকিব, ইমদাদুল হক এবং সাথী জমোদ্দার।
এরপরই দ্বিতীয় পর্বে পিস অ্যাম্বাসেডরদের দ্বারা প্রেরিত সমাধান গুলোকে যাচাই বাছাইয়ের জন্য বিচারক মণ্ডলীদের বিশেষ এক বোর্ড গঠন করা হয়েছিল যেখানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, একাত্তর টিভি’র বিশেষ প্রতিবেদক ফারজানা রূপা এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের পিটিআইবি প্রজেক্ট ম্যানেজার রবার্ট স্টলম্যান। প্রতিটি দলই খুব চমৎকারভাবে আমাদের সমাজের বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের প্রস্তাবিত সমাধানগুলো উপস্থাপন করেন। তাদের এ উপস্থাপনায় উঠে আসে আমাদের সমাজের ভিন্ন ভিন্ন মতামতের জন্য ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং অসহিষ্ণুতা, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর নানা সমস্যা, পর্যটন অঞ্চলে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো, বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের মাঝে সহাবস্থানসহ ইত্যাদি বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীদের সম্পর্কিত নানা বিষয় ।
তারপরই বিচারক মণ্ডলীদের সূক্ষ্ম যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে পিস অ্যাম্বাসেডরদের দ্বারা গঠিত দশটিরও অধিক দলের মধ্য থেকে চারটি দলকে বিজয়ী দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয় “ই”-দলকে যেখানে প্রতিযোগী হিসেবে ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইফুর রহমান, চট্টগ্রাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. মনির হোসেন,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শামামা আক্তার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের তাজরিন সুলতানা পুতুল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশবিদ্যালয়ের ফাহমিদা আক্তার এবং আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সারজিল হুদা তাহসিন।
যৌথভাবে, দ্বিতীয় দল হিসেবে নির্বাচিত হন “ডি ও এইচ দল”। ডি দলের প্রতিযোগীদের মধ্যে ছিলেন- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরাজ হাওলাদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মল্লিক মোকাররাবিন হোসেন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. তাইফুর রহমান , বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের ফারজানা ফারিন ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখাওয়াত হোসেন সাকিব এবং এইচ দলের প্রতিযোগীদের মধ্যে ছিলেন- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারমিন আক্তার বৃষ্টি, কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এম্পা ইয়াছমিন, বিইউএফটির এস এম হাফিজুল্লাহ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সজল রবিদাস। তৃতীয় দল হিসেবে নির্বাচিত হন “দল-আই” যেখানে প্রতিযোগীদের মধ্যে ছিলেন- পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরিনা তাসনিম রুপা, হামদার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. আসাদুল হক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. ওমর ফারুক জয়।
সবশেষে , উপস্থিত প্রত্যেকেই দ্যা আর্থ সোসাইটিকে তাদের এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশের পিটিআইবি প্রজেক্ট ম্যানেজার রবার্ট স্টলম্যান ইয়ুথদের প্রস্তাবিত সকল সমাধান গুলোর প্রশংসা করে তাদের আরও বেশি বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর জন্য উদ্ভাবনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।