শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বছরে ২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন

আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৩৪

জরাজীর্ণ ভবন, টিনের ছাউনি দিয়ে গড়া স্কুলঘরের পাঠদান বা মেঘ দেখলেই বৃষ্টির ভয়ে স্কুল ছুটি—এমন দৃশ্য এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। কারণ সরকার তালিকা ধরে ধরে স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছে। দিচ্ছে ভবনের সব আসবাবপত্রও। শুধু তাই নয়, ভবনের রং করা, খসে পড়া পলেস্তারার জায়গা সংস্কারসহ নানামুখী কাজের জন্য বরাদ্দও দিচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার কাজের তদারকি করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। এই অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের তালিকা দিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকেও সরেজমিনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব তালিকার ভিত্তিতেই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, এখন বছরে ২ হাজার প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন তৈরি করা হচ্ছে। অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে নতুন ভবন পাবে ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ৫০টি প্রকল্পের মাধ্যমে এসব ভবনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এতে শ্রেণিকক্ষ থাকবে ৯৫ হাজার। আর নতুন এই শ্রেণিকক্ষের সুবিধা পাবে ৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৭০ শিক্ষার্থী। এছাড়া একই সময়ে ১২৩টি নতুন ছাত্রাবাস, ৫৫৮টি ছাত্রীনিবাসও পাবে শিক্ষার্থীরা। অধ্যক্ষের জন্য বাসভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য জিমনেশিয়াম, অডিটোরিয়ামও থাকবে। এসব ভবনে ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য র্যাম্প এবং পৃথক টয়লেট, টানা বারান্দা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা ও ঘুলঘুলি স্থাপন, ঢালু ছাদ এবং ছাদে লাল টালি স্থাপন, শহর এলাকায় ছয়তলা, সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় চারতলা ভবন, হাওর, বিল এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় নিচতলা ফাঁকা রেখে পাঁচতলা আশ্রয় কেন্দ্র কাম শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, কোস্টাল এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, পাহাড়ি এলাকায় ভবন প্রটেকশন ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যেই এসব কাজ সমাপ্ত হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ।

শুধু ভবন নির্মাণ নয়, সংস্কারের জন্যও প্রতিবছর বরাদ্দ রাখা হয়। এ খাতে ৫ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বছরে এ খাতে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় বলে ইইডি জানিয়েছে। এ অর্থে প্রতিষ্ঠানে রং করানো, টয়লেট নির্মাণসহ ছোটখাটো সংস্কার কাজ করতে পারছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এর আগে বর্তমান সরকারের শাসনামলে ২০১৮সাল পর্যন্ত  সারা দেশে ২৩ হাজার ৯৭৯টি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। এ সময়ে ৭ হাজার ৬৪১টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন সংস্কার করা হয়।

তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। গ্রামীণ  স্কুলে চারতলা ভিতবিশিষ্ট চারতলা, হাওড় ও সমুদ্র উপকুলীয় এলাকায় নিচতলা ফাঁকা রেখে পাঁচতলা, মেট্রোপলিট এলাকায় ছয়তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

এর আগে যে সব প্রতিষ্ঠানে দুই থেকে ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট একতলা নির্মাণ করা হয়েছিল এমন ৩ হাজার ২৫০টি বেসরকারি স্কুলের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এসব ভবনে শিক্ষার্থী উপযোগী সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে।  কাজ চলছে ১ হাজার ৮০০ মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের কাজও।  এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর এলকায় ২৫টি প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ করা হচ্ছে ছাত্রীনিবাসও। আর সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওর এলাকায় ৪০ টি ভবন নির্মাণ করা হবে।  

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক মীর মুয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে প্রাপ্যতা আছে এমন আড়াইহাজার স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় এখনও সরকারি এই বরাদ্দ পৌঁছায়নি। এর কারণ হিসেবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, অনেক প্রতিষ্ঠানের জমি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে ভবন নির্মাণ করা যায়নি। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানের তথ্য শিক্ষা বিভাগে যথাযথভাবে পৌছায়নি। ফলে বরাদ্দ দিতে পারেনি শিক্ষা বিভাগ। তবে তালিকা ধরে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে বলে শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সঠিক তদারকির অভাব ও উদাসীনতার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন বা সংস্কারের জন্য কোন কোন খাতে সরকারি অনুদান পাওয়া যায় সে সম্পর্কেও অবহিত নন। এছাড়া সুযোগ থাকলেও প্রতিষ্ঠানের ফান্ডেও প্রতিষ্ঠানের ছোটখাটো সংস্কারও করছে না। ফলে প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো অল্পতেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ভবন নির্মাণের কাজ সঠিকভাবে তদারকি ও কাজের পরিধি বৃদ্ধির জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস চালু করা হয়েছে। পদসংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে কাজের গতি আরো বৃদ্ধি পাবে।