সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলায় ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং কিংবা চলতি বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ভিডিও তৈরি করে করোনা মহামারির দিনগুলোতে বাংলাদেশে রীতিমতো সাড়া ফেলেছিলেন যে মানুষটা, তিনি খালিদ ফারহান।
যে সাদামাটা গল্পের শুরুটা উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, সেই গল্পটা এখন বাংলাদেশের অন্যতম সফল ইউটিউবার আর ডিজিটাল মার্কেটারের। ২০১০ সালে উদয়নের গল্পের ইতি টেনে ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। এই সময়টাতেই আপওয়ার্কে কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং হাতেখড়ি হয় তার। কলেজ জীবনে এই কাজ করে আর্টিকেল প্রতি ১ ডলার আয় করাই ছিল তার জীবনের প্রথম উপার্জন।
কলেজ জীবন শেষে আর দশটা সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো তার ক্ষেত্রেও পরিবার থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার কথা বলেন। কিন্তু তিনি ঠিক করেন বিবিএ-তে পড়বেন। ২০১৩ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ভর্তি হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার শেষ পর্যায়ে এসে তিনি ব্যাংক এশিয়ায় ইন্টার্নশিপ করেন। সমসাময়িক সময়েই তিনি ইউনিভার্সিটি অফ আয়ারল্যান্ডের ‘ট্রিনিটি কলেজ ডাব্লিন’-এ ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ পান। যেটি পৃথিবীর শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি। আয়ারল্যান্ডের ডাব্লিনে স্নাতকোত্তর পড়ার সময়েই তিনি গুগল থেকে ইন্টার্নশিপের ইন্টারভিউ অফারসহ আরও চারটা চাকরির অফার পেয়েছিলেন। কিন্তু যোগদান না করে তিনি নিজের এজেন্সি নিয়েই কাজ শুরু করেন আয়ারল্যান্ডে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি ২০১৭ সালে প্যাসিভ জার্নাল একাডেমি নামে অনলাইন একাডেমি শুরু করেন। যেটি বর্তমানে খালিদ ফারহান একাডেমি নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
তার অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর স্বপ্ন নিয়ে খালিদ ফারহান বলেন, ‘এটি মূলত হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্লেসমেন্টের মতো। কেউ যদি উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে স্নাতক না পড়তে চান, তবে তিনি আমাদের এই অনলাইন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারবেন। যেখানে তাকে ৪০টি কোর্সের সমন্বয়ে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের ব্যাপারে পুরোপুরি দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সর্বপ্রথম ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন খালিদ। মূলত বাংলা ভাষায় ফ্রিল্যান্সিং কিংবা এসইও’র জন্য ভালো কন্টেন্টের অভাববোধই তাকে ভিডিও তৈরিতে অনুপ্রাণিত করে তোলে। ২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দুই ইউটিউবার এনায়েত চৌধুরী ও সাদমান সাদিকের সাথে একত্রে ট্রাইনোমিয়াল পডকাস্ট নামে একটি পডকাস্ট চ্যানেল শুরু করেন। করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে ইউটিউবার হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। এখন পর্যন্ত তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় পৌনে পাঁচ লক্ষ মানুষ যুক্ত আছেন এবং ফেসবুকে অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ। তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের বেকার ও অদক্ষ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার।