'দেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশ তরুণ, যাদের বয়স ২৫-এর নিচে। এই তরুণ সমাজকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি উন্নতিশীল দেশের অগ্রযাত্রায় বড় শক্তি হবে তরুণ সমাজ।' আলাপচারিতায় এমনটিই বলছিলেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কতৃর্পক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ।
তিনি আরও বলেন, 'হাই-টেক পার্ক ২০১০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতেই গড়া। ইতোমধ্যে সারা দেশে ১০টি হাই-টেক পার্ক ও শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার চলমান আছে। ২০৩১ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০৩টি স্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলকি পার্ক অথবা আইটি ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তোলা হবে, প্রত্যেকটি জেলায় থাকবে কমপক্ষে ১টি, বিভাগীয় পর্যায়ে হাই-টেক পার্ক হবে এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়েও থাকবে।'
'ইতোমধ্যে আমরা প্রায় ২২ হাজার তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, আইসিটি বিভাগ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এবং দেশ এখন ২য় বৃহত্তর আউটসোর্সিং সিটি। দেশে প্রায় ৬ লক্ষ তরুণ তরুণী ফ্রিল্যান্সিং করে। সব মিলিয়ে আমাদের আইসিটিতে ইনকাম যেখানে ২০০৯ সালে ছিল ২৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার সেখানে এখন ১ হাজার ৩শত মিলিয়ন ইউএস ডলার।'
'আমাদের তরুণরা কেউ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছে, উদ্ভাবক হিসেবে কাজ করছে, উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছে, কেউ বা স্টার্টআপ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের জন্য আমরা অফিস দিচ্ছি, প্রয়োজনে ফান্ড দিচ্ছি। আর সেগুলো পাচ্ছে আইসিটি বিভাগের এটুআই থেকে, আইসিটি বিভাগ থেকে, আইডিয়া প্রকল্প থেকে। এবং আমরা হাই-টেক পার্ক থেকে এরকম একটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। আইসিটি বিভাগ ও হাইটেক পার্ক তরুণ সমাজকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে, তাদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা যেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে পারবো না, আগামী প্রজন্ম সেটা করে দেখাবে বলে আমি বিশ্বাস রাখি।'
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে ড. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০২১ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তরুণ প্রজন্ম হলো প্রযুক্তির বড় শক্তি।
যেসব তরুণরা ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে আলোচনায় আসছেন, তেমনই তিন তরুণের গল্প থাকছে এই আয়োজনে।
সানি জুবায়ের, তরুণ বিজ্ঞানী
সানি জুবায়েরের স্কুলজীবন কেটেছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর এখন ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করছেন। ছোটবেলায় রোবট নিয়ে খেলা থেকে ভালোলাগার শুরু, পরে তা নতুন জ্ঞান আহরণের নেশায় পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের হয়ে সিনিয়র গ্রুপে সর্বপ্রথম ব্রোঞ্জ ও টেকনিক্যাল পদক অর্জন করেন সানি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্য পেয়েছেন এই তরুণ বিজ্ঞানী।
অর্জনের খাতায় রয়েছে ১৬টি জাতীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় পদক অর্জন, যা মধ্যে ছিল জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ, ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা, জাতীয় রোবটিক চ্যালেঞ্জ, জাতীয় রোবট অলিম্পিয়াডসহ আরো কয়েকটি প্রতিযোগিতা। আন্তঃস্কুল এবং কলেজ প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ৫৬টি পুরস্কার পান তিনি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় ১৫টি পদক অর্জন করেন, এর মধ্যে ছিল— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে পেয়েছেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২১’।
পিয়াল হাসান স্বাধীন, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, ইচ্ছে হাট
২০১৭ সালে 'সমৃদ্ধির পথে, এক সাথে' স্লোগানে ‘ইচ্ছে হাট’ নামক সামাজিক সংগঠন যাত্রা করে। ‘ইচ্ছে হাট’-এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ সহজেই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছে। ঘরে বসে আয়ের সুযোগ পাবে। এজন্য মোবাইল অ্যাপের ডিজাইন শেষ হয়েছে। যিনি পড়াশোনা জানেন না, তিনিও ব্যবহার করতে পারবেন এটি। এছাড়া একে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী করেও গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলতে আছে ‘ইচ্ছে স্কুল’। সারাদেশে সংগঠনটির ৩৮জন প্রতিনিধি রয়েছে। ইচ্ছে হাটের প্রতিষ্ঠাতা পিয়াল হাসান স্বাধীন।
পিয়াল জানান, আমাদের শুধু মাত্র একটি আইডিয়া ছিল, বসার মতো যায়গা ছিল না। আমাদের মত তরুণদের বড় শক্তি এখন হাই-টেক পার্ক। এখানে আমরা দারুণ কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি। এছাড়া পুরো হাই-টেক পার্কে বড়বড় কোম্পানী ও টেক রিলেটেড মানুষের সাথে কমিউনিকেশন বিল্ডাপ হয়েছে। ফলে যেকোন সমস্যা সমাধান করতে পারি খুব সহজে। স্বপ্নবাজ তরুণদের স্বপ্ন দেখায় না, স্বপ্ন পূরণে কাজ করছে হাই-টেক পার্ক।
সাদ্দাম হোসেন, প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উইনকিটেক লিমিটেড
নারী নিরাপত্তায় কার্যকরী নিরাপত্তা অ্যাপ সেলফ প্রটেক্ট, এটি উইনকিটেক লিমিটেড এর উদ্ভাবন। নতুন এই উদ্ভাবনের পর থেকেই অ্যাপটির ঝুলিতে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে অসংখ্য অর্জন। ২০২০ সালে ইয়াং বাংলার জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উদ্ভাবনীমূলক প্রযুক্তি খাত থেকে উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প হিসেবে অনুদান পায় সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপ টিম। ২০১৭ সালে নাগরিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) সলভ-এ-থন প্রতিযোগিতায় দেশসেরা ১০ জনের একজন এবং একইসঙ্গে উদ্ভাবক অন্বেষণের রিয়েলিটি শো 'উদ্ভাবকের খোঁজে' প্রোগ্রামে সারাদেশ থেকে দুই হাজারের বেশি উদ্ভাবকের মধ্যে দেশসেরা ১০ জনের মধ্যে স্থান অর্জন করেন উইনকিটেক-এর প্রতিষ্ঠাতা সাদ্দাম হোসেন।
২০১৭ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত মেহেরপুর ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় অর্জিত হয় শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন ও তরুণ উদ্ভাবকের খেতাব। অর্জনের খাতায় রয়েছে ২০১৭ সালের খুলনা বিভাগীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের সম্মাননা। উইনকি টেক লিমিটেড বাংলাদেশ হাই-টেক পার্কের অধীনে থাকা এক প্রযুক্তিবান্ধব প্রতিষ্ঠান।
উদ্যেক্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমাদের উইনকিটেক লিমিটেডের টিম অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি ও প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া অফিস স্পেস আমাদের উদ্ভাবনী প্রকল্প সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপ এর জন্য একটি ডেডিকেটেড টিমকে কাজ করার জায়গা ও সুযোগ দিয়েছে। এতে করে আমাদের আরো নিত্যনতুন উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে গবেষণা ও সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপটি সারাদেশে বাস্তবায়ন করতে পারছি।