শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দৌলতদিয়া ঘাটে যানজট: ফেরিতে উঠতে ১৪ ঘণ্টা অপেক্ষা

আপডেট : ০৭ মে ২০২২, ২১:৫৩

ঈদের ছুটি শেষ, এবার কর্মস্থলে ফেরার পালা। জীবন জীবীকার তাগিদে কর্মস্থলগামী লাখো মানুষের ঢল নেমেছে দৌলতদিয়া ঘাটে। এতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ মগবুলের দোকান এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

ফেরিতে উঠতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী, চালক ও সহকারীরা। টয়লেট, পানি ও খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক, নারী ও শিশুরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

অন্যদিকে ফেরিঘাটে যানজট কমাতে ঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক সড়কে অপচনশীল পণ্যবাহী ২ শতাধিক ট্রাক ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সিরিয়ালে রাখা হয়েছে।

ট্রাকের লম্বা লাইন। ছবি: ইত্তেফাক

সাধারণ যাত্রী ও মোটরসাইকেলের চাপে বড় যানবাহনগুলো ফেরিতে উঠতে না পাড়ায় কম সংখ্যক গাড়ি নিয়েই দৌলতদিয়া ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে ফেরি। যে কারণে যানবাহনের চাপ কমছে না।

শনিবার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী গাড়ি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে। সাধারণ যাত্রী, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি  সরাসরি ফেরিতে উঠতে পারলেও দূরপাল্লার বাস ও জরুরি পচনশীল পণ্যের গাড়ি লম্বা লাইনে পড়ে আছে। ফেরির জন্য অপেক্ষমাণ অধিকাংশ এসব গাড়ি শুক্রবার রাতে এসে পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে রয়েছে। ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পার হলেও তারা এখনো ফেরির নাগাল পায়নি। ফেরিতে উঠতে আরও দু-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে তাদের।

শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌরুটের যানবাহন পারাপার ব্যাহত হওয়ার কারণে বেশির ভাগ যাত্রী ও যানবাহন এই নৌরুট দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এতে করে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

লঞ্চঘাটে যাচ্ছে মানুষ।

আবার ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে ফেরির নাগাল না পেয়ে হেঁটে অথবা রিকশায় অনেক যাত্রীকে ঘাটের দিকে রওনা হতে দেখা যায়। দীর্ঘ যানজটের কারণে লঞ্চ পারাপার পরিবহনের অনেক যাত্রীকে ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে দীর্ঘপথ হেঁটে লঞ্চঘাটে পৌঁছাতে হচ্ছে। এতে ব্যাগ-বোঝা নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীদের।

অপরদিকে লঞ্চ ঘাটেও একই চিত্র। এই নৌরুটে চলাচলকারী ২২টি লঞ্চের প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা ১২৫ থেকে ১৭৫ জন। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে তার দ্বিগুণ। যদিও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে লঞ্চঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত, রোভার স্কাউটস কাজ করছে। কিন্তু যাত্রীরা কেউ কারো কথা মানতে নারাজ। জোর করে ফেরিতে উঠে যাচ্ছে তারা।

যশোর থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়িরচালক মামুন মিয়া বলেন, শুক্রবার দুপুরে দৌলতদিয়ার অদূরে মহাসড়কে লম্বা লাইনে আটকা পড়ি। ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত আমাদের ফেরিতে ওঠার সুযোগ হয়নি। যানজটের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাধারণ যাত্রী, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, যাত্রীবাহী পরিবহন আগে ফেরিতে ওঠার সুযোগ করে দেওয়ায় পণ্যবাহী গাড়ি যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে।

ফেরির অপেক্ষায় মোটরসাইকেলচালকরা।

মাগুরা থেকে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মিজানুর রহমান নামের এক যাত্রীকে দুই বছরের এক শিশুকে নিয়ে গোয়ালন্দ ফিডমিল এলাকায় গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর পরে মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে পরিবার নিয়ে মাগুরায় গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। শুক্রবার রাতে রওনা দিয়েছি, আজ শনিবার দিন পার হয়ে যাচ্ছে এখনো ফেরির নাগাল পাইনি। ছোট বাচ্চাটা গরমে ছটফট করছে, তাই গাছের ছায়ায় এসে দাঁড়িয়ে আছি।

অপরদিকে দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি ও লঞ্চে যাতে কেউ বাড়তি টাকা না নিতে পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নজরদারি করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যাতে সকলে নিয়ম মেনে পার হয় সেজন্য বাড়তি পুলিশ মোতায়েন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকি করতে দেখা গেছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার মজুমদার জানান,  দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি ও লঞ্চে যাতে কেউ বাড়তি টাকা না নিতে পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি করা হচ্ছে। সকলে নিয়ম মেনে পার হয় সেজন্য বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ফেরিঘাটে মানুষের ভিড়।

দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের ম্যানেজার মো. সেলিম মিয়া জানান, গত শুক্রবার সকাল থেকেই লঞ্চঘাটে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে আজ শনিবার ভোর থেকেই যাত্রী চাপ বেশি। ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। তবে লঞ্চ ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা  জোর করে লঞ্চে উঠে যাচ্ছে। যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। 

ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) তারক পাল জানান, যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে অপচনশীল পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে সিরিয়ালে আটকে রাখা হয়েছে। ছোট গাড়িগুলোকে বাইপাস সড়ক দিয়ে এবং অন্যান্য গাড়িগুলোকে ফোরলেন সড়ক দিয়ে দুই সাড়িতে ঘাটে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন জানান, শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌরুটের যানবাহন পারাপারে ব্যাহত হওয়ার কারণে এই রুটে চাপ বেড়েছে। যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ২১টি ফেরি চলাচল করছে।

 

ইত্তেফাক/ইউবি