শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কাঠপোড়া অসহনীয় গরম জীবন

আপডেট : ০৮ মে ২০২২, ০২:৩৯

বেশ কয়েকদিন যাবত্ তাপপ্রবাহে পুড়ছে সারাদেশ। বায়ুমণ্ডল ও মাটি এখন প্রচন্ড উত্তপ্ত। বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় আরো বেশি অসহনীয় হয়ে পড়ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। ঘরে-বাইরে, শহর- বন্দর ও গ্রামে সবখানেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। সামান্য বৃষ্টিতে প্রশান্তি পেতে উদগ্রীব মানুষ। ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই ঊর্ধ্বমুখী তাপপ্রবাহ আপাতত বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়াও তাপপ্রবাহ নতুন নতুন এলাকায় বিস্তার লাভ করার খবরে অস্বস্তিতে পড়েছে দেশবাসী।

তীব্র অসহনীয় তাপমাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং হিটস্ট্রোকের সংখ্যাও। এছাড়াও পানিস্বল্পতা, গরম ঠান্ডা এবং অতিরিক্ত দুর্বলতা ও অবসাদ এখন প্রতিটি ঘরেই দৃশ্যমান। বাংলাদেশ এপ্রিল-মে মাসে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। এ সময় তীব্র গরমে পরপর আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ঝড়ো আবহাওয়ার তৈরি হয়। প্রাক বর্ষা মৌসুমে তাপমাত্রা বেশি থাকায় কালবৈশাখীর দাপটও বেশি থাকে। তবে বর্তমানে পুবালি বাতাসে ও পশ্চিমা বাতাসের সংযোগ ঘটছে না। এসব কারণে দেশে খরা পরিস্থিতি চলছে। সূর্যের কিরণ কাল বাড়ছে।

বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর রাজধানীতে তাপমাত্রার রেকর্ড হচ্ছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনভর টানা প্রখর রোদ, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য এবং ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত থাকার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে ভ্যাপসা গরম। এছাড়া বাতাসে অতিরিক্ত আদ্রতা সৃষ্টি করছে প্রচণ্ড ঘামের। এই অসহনীয় গরমে পথচারীরা যেন আগুনের হল্কা ছুয়ে চলাফেরা করে। অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়মিত জেনারেটর চালানোর ব্যবস্থা না থাকায় চিকিত্সাধীন রোগীদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। খোলা জায়গায় কাজ করে এমন শমিকদের যেন কষ্টের সীমা নেই। এদিকে তীব্র গরম ও ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানি অতিষ্ঠ করে তুলেছে রাজধানীবাসীর জীবন। প্রখর রোদ উপেক্ষা করেই চলতে হয় পথচারীদের। এত অস্বাভাবিক গরমে পরিবহনগুলোর ভিতরের ঘেষাঘেষি পরিবেশ, অতিরিক্ত যানজট এবং পরিবহনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা ইত্যাদি যেন যাত্রীদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে।

এছাড়াও গরমে মানুষ অতিরিক্ত তৃষ্ণার্ত থাকায় তাদের তৃষ্ণা মেটাতে রাস্তাঘাট থেকে মানুষ আখের রস রং ও বরফ মিশ্রিত শরবত এবং খোলা আকাশের নিচে ধুলোবালি মিশ্রিত তরমুজ, পেঁপে ও কাঁচা আমের আচার কিনে খাচ্ছে। যা অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর ও ভেজাল যুক্ত। দুপুরে আবহাওয়া গরম হবে তা কিন্তু ভোরের দিকে বোঝা যাচ্ছে না একেবারেই। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে আটটা পেরোতেই বদলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। উধাও হওয়া। ঘড়ির কাঁটা সাতটা ছুতেঁই তীব্র তাপ প্রবাহ বইতে শুরু করে। আর দশটার পর থেকে তা তো আগুনের হল্কার মতো পুড়িয়ে দিচ্ছে চামড়া। অবশ্য তার সঙ্গে মাঝে মাঝে শরীরে ছুঁয়ে যায় শুকনো গরম বাতাস।

এদিকে এমন অবস্থায় হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়ায় বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিত্সকরা। গত বছরে অনেক মানুষের এ সময় হিটস্ট্রোকে মৃত্যু ঘটে। রাজধানীতে ইতিমধ্যে তাপমাত্রা সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্েতর সংখ্যা বাড়ছে। তাপমাত্রা বাড়লে ডায়রিয়ায় জীবাণুর সংক্রমণের ক্ষমতাও বেড়ে যায়।

চিকিত্সা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ডায়রিয়া মুক্ত থাকতে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। আর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। অতি প্রয়োজন না হলে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। রোদে কাজ করার সময় মাথা ও শরীর ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় খাবার এবং পানীয় গ্রহণ করতে হবে। ঢিলেঢালা পোশাক বিশেষ করে সুতি কাপড় পরিধান করতে হবে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ছায়াচ্ছন্ন স্থানে শুয়ে দিতে হবে। শীতল পানি দ্বারা গা মুছে দিতে হবে। এতে উন্নতি না হলে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এসজেড

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন