শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাজারে এখন সহজেই মিলবে দেশি শোল

আপডেট : ০৮ মে ২০২২, ১৪:১৮

দেশে মিঠা পানির দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় মাছ শোল। এ মাছটি খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। একসময় খালবিল, হাওর-বাঁওড়ে প্রচুর পরিমাণে শোলমাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে জলাশয় সংকোচন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পানি দূষণ এবং অতি আহরণের ফলে মাছটির বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ায় এর প্রাপ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। 

মাছটিকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এবং চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে সম্প্রতি এর প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি কেন্দ্রে এ সফলতা অর্জিত হয়। গবেষক দলে ছিলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শাহা আলী, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রবিউল আওয়াল, মালিহা খানম, ফারজানা জান্নাত আঁখি ও মো.সাইফুল ইসলাম।

গবেষক দলের প্রধান ড. মো. শাহা আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, শোল মাছের প্রজনন ও চাষ অন্য মাছের তুলনায় অপেক্ষাকৃত জটিল। এরা অন্যান্য মাছের মতো খৈল/কুঁড়াজাতীয় খাবার খেতে অভ্যস্ত নয়। ফলে পোনা তৈরির জন্য মা-বাবা অর্থাৎ ব্রুডমাছ তৈরি করা খুব কষ্টকর বিষয় ছিল। প্রথমে এদেরকে প্রোটিনসমৃদ্ধ দেশীয় একটি খাবারে অভ্যস্ত করা হয়েছে। অতঃপর ব্রুড তৈরি করে হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে পোনা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এ মাছটি স্বজাতি ভোজী হওয়ায় একটি আরেকটিকে ধরে ধরে খায়। ফলে পোনা বাঁচিয়ে রাখাও ছিল আরেকটি চ্যালেঞ্জ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শোল মাছের বাজার মূল্য অনেক বেশি। তাই মাছটির পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হওয়ায় দেশে শোল মাছ চাষে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

বিএফআরআই সূত্র জানায়, নেত্রকোনা ও হাওরাঞ্চল থেকে সুস্থ-সবল দেশি শোল মাছ সংগ্রহ করে গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরে প্রতি শতাংশে ১০-১২টি হারে মজুত করে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করে প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়। শোল মাছের প্রজননকাল সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে ও এপ্রিল-আগস্ট এদের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী মাছ আকারে অপেক্ষাকৃত বড় হয়। এ মাছের ডিম্বাশয় এপ্রিল মাস থেকে পরিপক্ব হতে শুরু করে। প্রতি গ্রাম স্ত্রী মাছে গড়ে ৮০-৯০টি ডিম পাওয়া যায়।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে শোল মাছের নিবিড় চাষ করা হয়। কিন্তু, আমাদের দেশে দেশীয় শোল মাছের পোনা না থাকায় এ মাছটিকে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছিল না। এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য ইনস্টিটিউটটি হতে অনেক বার প্রচেষ্টার পর চলতি বছরে সফলতা আসে। পোনা উৎপাদিত হওয়ায় শোল মাছকে এখন চাষের আওতায় আনা যাবে। তথ্যমতে, প্রাইভেট খামারিদের উদ্যোগে চাষের জন্য ২০১১ সালে ভিয়েতনামী শোল মাছের পোনা দেশে আমদানি করা হয় এবং চাষাবাদ শুরু করা হয়। কিন্তু বিদেশি এ মাছটি দেশে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক/দুই বছরের মধ্যে দেশীয় শোল মাছের পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তর করা হবে। চাষের মাধ্যমে এ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ মাছটি রপ্তানি করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, দেশীয় শোল মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা ছিল ইনস্টিটিউটের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ গবেষণার পর চলতি এপ্রিল মাসে শোল মাছের প্রজনন বিষয়ে সফলতা আসে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শোলমাছসহ ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৩৪ প্রজাতির দেশীয় ও বিপন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।

ইত্তেফাক/ ইআ