সন্ধ্যা ঘনাতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশার তীব্র আক্রমণ, নালা-নর্দমায় জমাট ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ এবং অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতা—এই ত্রিমুখী সমস্যায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসিন্দারা।
গত বৃহস্পতিবার ভোর রাতে কয়েক দফা বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হয়ে পড়ে নগরীর মুরাদপুর, চকবাজার, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ ২ নম্বর গেট এবং বায়েজিদ-অক্সিজেন সড়কের বিভিন্ন অংশ ও নিচু এলাকা। পানি অবশ্য বেলা বাড়ার সাথে সাথে দ্রুতই সরে যায়।
কিন্তু গত প্রায় এক বছর ধরে নগরীতে মশার উপদ্রব সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মশা বৃদ্ধি ও মশা প্রজননের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী নগরীতে সিডিএর তত্ত্বাবধানে চলমান খাল-নালা সংস্কার ও পুনরুদ্ধার কাজের জন্য স্থানে স্থানে বাঁধ দিয়ে কাজ করাকেই মূলত দায়ী করেছেন। বিশেষ করে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি মশক নিধনের ব্যর্থতার জন্য চিহ্নিত প্রতিকূল পরিস্থিতিগুলো তুলে ধরেন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর গৃহীত ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামের সাফল্য-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে মেয়রের ভাষ্য হচ্ছে—নাগরিক অসচেতনতার কারণে যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা এবং সিডিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নে খালের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দেওয়ায় বদ্ধ পানি মশা প্রজননের অনুকূল ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও ছিটানো ওষুধের কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অপ্রতুলতায় মশক নিধনে শতভাগ সফলতা আসেনি। মেয়র অবশ্য ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামে ৪১টি ওয়ার্ডের নালা-নর্দমা থেকে ১০ হাজার ৬০০ টন আবর্জনা অপসারণ করে ভাগাড়ে ডাম্পিং করার কথা বলেন, ৫০টি ছোট-বড় খাল থেকে জমাট আবর্জনা ও ভরাট হয়ে যাওয়া মাটি অপসারণের তথ্যও দেন।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস ইত্তেফাককে বলেন, নগরীর নালা-নর্দমা-খালে প্রতিদিন যে আবর্জনা-জঞ্জাল পড়ছে সেগুলো অপসারণে সিটি কর্পোরেশন গত বছর কোনো কাজই করেনি। এসব কাজ মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময় নিয়মিতভাবে সম্পন্ন হতে দেখা যেত। চলতি বছর যদিও সিটি কর্পোরেশন নালা-খাল থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণে কিছু কাজ করেছে। তিনি বলেন, ‘নগরীতে খাল-নালা সংস্কারের কাজ এখনো শেষ হয় নাই। আমাদের টার্গেট ছিলো এপ্রিল মাসে সংস্কারাধীন খালের বাঁধগুলো খুলে দেওয়ার। আশা করছি আর মাত্র ১৫ দিন পর মে মাসের মাঝামাঝি বাঁধগুলো খুলে দিতে পারব। পানি প্রবাহ শুরু হয়ে গেলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া চলতি মে মাসেই সম্পন্ন হয়ে যাবে বিভিন্ন খালের মুখে স্লুইস গেটগুলোর নির্মাণ কাজ। এগুলো শীঘ্র চালু হলে নগরীর আগ্রাবাদ-হালিশহরসহ বিভিন্ন স্থানে আর ঢুকতে পারবে না জোয়ারের পানি। ফলে সারা বছর আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সমস্যারও সমাধান হবে।
এদিকে মশার উপদ্রব দিন দিন এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে নগরবাসীর পক্ষে রাতে ঘুমানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সময় কয়েল জ্বালিয়ে, স্প্রের ছিটিয়েও মশা তাড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে। গরম ও মশার তীব্র আক্রমণে শিক্ষার্থীরা মশারি টানিয়েও নিস্তার পাচ্ছেন না। সব পরিবারেই মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে কয়েল-স্প্রের কিনতে খরচ করতে হচ্ছে বিস্তর অর্থ। সেই সাথে তারা রয়েছেন নানা অসুখ-বিসুখের ঝুঁকিতে। নগরীর নানা স্থানে ফি-বছর সড়ক উঁচু করে তোলা হলেও সড়কের কালভার্ট ও ছোট ব্রিজগুলোকে সময়মতো উঁচু করে তুলতে সিটি কর্পোরেশন ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে নিচু ব্রিজ-কালভার্টগুলোর সংকীর্ণ মুখ সহজেই ময়লা-আবর্জনায় আটকে যাচ্ছে। এতে সরতে পারছে না দৈনন্দিন গৃহস্থালির ময়লা পানি। এই জমে থাকা নোংরা পানির কারণেই ঘরবাড়ি ডুবছে, মশার বংশবৃদ্ধি ঘটছে এবং সেই সঙ্গে তীব্র দুর্গন্ধে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবন। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল সকাল পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৩ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।