শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জ্বলছে শ্রীলঙ্কা

আপডেট : ১১ মে ২০২২, ০৪:৪৭

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। বিক্ষোভকারীরা শাসক দলের তিন জন সাবেক মন্ত্রী ও দুই জন এমপির বাড়িতে আগুন ধরিয়েছে। রাজাপক্ষদের পৈতৃক বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে।

প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে তার অফিস ঘিরে বিক্ষোভ চলছে। জনরোষের মুখে পড়ে দেশটির একটি নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন সোমবার পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তার পরিবারের সদস্যরা। দেশটিতে সামরিক শাসন জারির আশঙ্কা করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে।

সোমবার দিনভর বিক্ষোভের পর রাত গভীর হতে থাকলে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা সরকার সমর্থক এবং সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালাতে শুরু করেন। শ্রীলঙ্কার পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা কলম্বোর উপকণ্ঠে একজন সরকার দলীয় এমপি অমরাকীর্তি আথুকোরালার গাড়িতে হামলা চালালে তিনি দুই জনকে গুলি করেন। এতে একজন মারা যান। এরপর ঐ এমপি আত্মহত্যা করেন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজাপক্ষের বাড়িতে, বিভিন্ন মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। মন্ত্রী সানাত্ নিশান্তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এর মধ্যে হাম্বানটোটায় রাজাপক্ষে পরিবারের নিজস্ব একটি বাড়ি যা একটি বিতর্কিত জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, সেটিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বাড়িগুলো ঘিরে আগুনের লেলিহান শিখা ঘিরে মানুষজন উল্লাস করছে। প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনের চারপাশের এলাকাতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজধানী কলম্বো জুড়ে উত্তেজনা চলছে। এমপিদের পালানো ঠেকাতে দেশটির বিমানবন্দরে যাওয়া এবং আসার সড়কগুলোতে লাঠি এবং রড নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়েছে। এক দিনের সহিংস বিক্ষোভে এ পর্যন্ত দেশটিতে একজন সংসদ সদস্যসহ সাত জন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশ জুড়ে চলা কারফিউ আজ বুধবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

সোমবার দিবাগত রাতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী মাহিন্দা রাজাপক্ষের সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিজের প্রধান গেট ভাঙার চেষ্টা করার পরে গতকাল ভোরে ভারী অস্ত্র সজ্জিত সৈন্যরা বিদায়ি প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে। বাড়ির ভেতর থেকে গুলি আসার পর তারা বাড়িতে কিছু অংশে আগুন দেয়। চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দেশটিতে গণবিক্ষোভ শুরু হবার পর প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে সোমবার পদত্যাগ করেন। বিক্ষোভের সময় দোতলা বাড়িটিতে পরিবারকে নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন মাহিন্দা। একজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বার্তা সংস্হা এএফপিকে বলেছেন, ভোররাতের দিকে অভিযান চালানোর পর সেনাবাহিনী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে খোলসা করেননি তিনি। যদিও সূত্রের খবর, ত্রিঙ্কোমালিতে নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। মাহিন্দাকে উদ্ধারের সময় বাড়িটির কমপাউন্ডে কমপক্ষে ১০টি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। মাহিন্দার বাড়ির সামনে তার সমর্থকরা আসে এবং স্লোগান দেয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হয়েছে।

বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়।

বিক্ষোভকারীরা এখন দেশের প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ দাবি করছে। তবে তিনি পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। বিদায়ি প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষে জরুরি অবস্থার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী কাউকে গ্রেফতার করলে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের আগে ২৪ ঘণ্টা নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারবে। ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং যানবাহনে তল্লাশি চালাতে পারবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একজন পুলিশ অফিসার কর্তৃক গ্রেফতারকৃত যে কোনো ব্যক্তিকে নিকটস্হ থানায় নিয়ে যাওয়া হবে।

জরুরি ক্ষমতার অপব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন বিশ্লেষক। কলম্বোভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভ কর্মকর্তা ভবানি ফনসেকা বলেন, জরুরি ক্ষমতা এবং কারফিউ উভয়ই বলবত্ থাকা অবস্হায় এর অপব্যবহার নজরদারিতে রাখবে কে? সহিংসতায় উসকানি এবং সংঘর্ষের ঘটনায় সাত জনের মৃতু্যতে রাজপক্ষকে গ্রেফতরের দাবি তুলেছেন বিরোধী দলের নেতারা।

 

ইত্তেফাক/ ইউবি