শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দক্ষিণ এশিয়ায় মানবসম্পদের উন্নয়ন

আপডেট : ১৫ মে ২০২২, ০৬:২২

ভৌগোলিকভাবে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলকে দক্ষিণ এশিয়া বলা হয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ রয়েছে মোট আটটি। প্রত্যেকটি দেশের মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক কাঠামো বেশ ভালো। তন্মধ্যে ভৌগোলিকভাবে এই অঞ্চলের প্রতিটি খাতে ভারতের অবস্থান সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি রয়েছে। যে চালিকাশক্তিতে দেশগুলোর কার্যক্রম হয় দেশে ও বহির্বিশ্বে। অর্থনৈতিক অবস্থান, প্রযুক্তিগত কর্ম, বৃহৎ অবকাঠামো, শক্তিশালী সামরিক অবস্থানের জন্য ভারত পুরো বিশ্বের কাছে সমীহজাগানিয়া দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশসহ নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান, আফগানিস্তানসহ বাকি দেশগুলোর কর্মকাণ্ড নিজস্ব ঢঙে চললেও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে শ্রীলঙ্কা নিজেদের দেউলিয়া হিসেবে ঘোষণা করেছে। অপরদিকে পাকিস্তানে সম্প্রতি ইমরান খান সরকারের পরিবর্তনের ফলে এ দেশটিতেও রাজনৈতিক অস্তিরতা বিরাজ করছে । যা দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্রে সুখকর বিষয় না।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ হচ্ছে দ্রুত বর্ধনশীল একটি দেশ। যার প্রমাণ হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। আর বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ হচ্ছে ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। অর্থনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্যসহ প্রতিটি খাতে দেশে ও বহির্বিশ্বে দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন লক্ষণীয়। পাশাপাশি পদ্মা সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যত্কেন্দ্র প্রমুখ দেশের উন্নতির গ্রাফে বিশেষ সংযোজন। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার শোচনীয় অর্থনৈতিক বিপর্যয় বাংলাদেশসহ বাকি দেশগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। দেশটিতে দক্ষ মানবসম্পদ থাকলেও লঙ্কানরা অবকাঠামো উন্নয়নকে মূল প্রাধান্য দিতে গিয়ে দক্ষ মানবসম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। যার মাশুল দিতে হচ্ছে দেশটিকে। অবকাঠামো নির্মাণ কোনো দেশের মূল উন্নয়ন হতে পারে না। বরঞ্চ অবকাঠামো খাত দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার একটি অংশ হতে পারে।

দক্ষ মানবসম্পদ গঠন করা হলে এবং তাদের দেশের প্রতিটি খাত অনুযায়ী কাজে লাগানো হলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। আর্থসামাজিক জীবনযাত্রার মান বিশ্বমানের হবে। তাছাড়া যে কোনো দুর্যোগকালীন পরিস্হিতিতে শক্ত হাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে দক্ষ মানবসম্পদ। জাতিসংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৩তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটান। অন্যদিকে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তান। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সর্বত্র নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিটি দেশকে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিটি দেশে চাহিদা অনুযায়ী মানবসম্পদ সরবরাহ করা হলে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান হবে। মানবাধিকার চাহিদা পূরণ হবে। এই অঞ্চলের চিহ্নিত সমস্যার প্রতিকার হবে। শিক্ষার গুণমান উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও রপ্তানি বাড়বে প্রতিটি দেশের। অর্থাত্ সুদক্ষ মানবসম্পদ নির্মাণ দক্ষিণ এশিয়ার পট পরিবর্তনে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করবে বিশ্বব্যাপী।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মানবসম্পদ নির্মাণের হার পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। কারণ বিভিন্ন অপ্রতুলতা রয়েছে এ অঞ্চলে। যেমন— অবকাঠামো উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া, রাজনৈতিক অস্তিরতা, ডিজিটাল শিক্ষার বিস্তার বৃদ্ধি না পাওয়া, কারিগরি শিক্ষার অভাব, দেশের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সমস্যা, বাড়তি ঋণ নেওয়া, সীমান্তজনিত সমস্যা ইত্যাদি। তাছাড়া পশ্চিমা অঞ্চলের তুলনায় গবেষণা কম হওয়াও অন্যতম বড় একটি কারণ মানবসম্পদ নির্মাণে।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ান এই অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ মানবসম্পদ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যেমন: সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, গবেষণা খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে, কারিগরি শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে হবে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে, অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে মানবসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে; বিশ্বমানের ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে, তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন সংস্থা সার্কের কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি উদ্ভাবনী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, বিনিয়োগকৃত অর্থ বৃদ্ধি করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করতে হবে। এতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃত হবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।

 

হ লেখক :শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এসজেড

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন