শৈশবে দল বেঁধে পায়ে হেঁটেই যেতাম পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের গাঁয়ে। কেন যেন মনে হয় কবি তার বাড়িতে আমাকে আমন্ত্রণ করেছেন। কবি সত্যিই তার কবিতার মাধ্যমে আমাদেরকে আমন্ত্রণ করে গিয়েছেন। কবি বলেন—‘তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে,/ আমাদের ছোট গাঁয়।/গাছের ছায়ায়, লতায় পাতায়/উদাসী বনের বায়।’
এই তো সেদিন ঈদের ছুটিতে ঘুরতে গিয়েছিলাম ফরিদপুরে পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের বাড়িতে। নিস্তব্ধ গ্রাম, স্রোতহীন কুমার নদ, খোলা বাতাস, প্রকৃতির দৃশ্য মন কেড়ে নেয়। কুমার নদের পাড় ঘেঁষে কবির বাড়ি। চারদিকের গাছপালা, বাগান, কবির সমাধি ক্ষেত্র, পাখির কিচিরমিচির শব্দ। কবির বাড়ি-আঙিনায় চারটি দোচালা টিনের ঘর। তাতে লেখা; কোনটি কার ঘর। দক্ষিণে কবির ঘর। বারান্দায় ছোট ছোট পাটের শিকা। ভেতরে নকশা করা মাটির রঙিন কলস রাখা।
অতি সাধারণ ঘরেই জন্ম নিয়েছিলেন এই কবি। কবির স্মৃতিঘরে বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি তুলে চার দেয়ালে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কবির জীবনের ব্যবহারের বিভিন্ন জিনিস। তার কাঠের আলমারি থেকে শুরু করে আছে একটা সুন্দর পালকিও। উঠানের পূর্ব দিকে এখনো ঢেঁকি-ঘরটি স্মৃতি স্বরূপ আছে। ঢেঁকি-ঘরের সামনে কবির লিখা কিছু কথা মনকে ছুঁয়ে গেল।
লেখা ছিল—‘আমাদের গরিবের সংসার। ঘি-ময়দা-ছানা দিয়ে জৌলুস পিঠা তৈরির উপকরণ মায়ের ছিল না। চাউলের গুঁড়া আর গুড়—এই মাত্র মায়ের সম্পদ’—এই কথাগুলোর মাঝে ছিল একরাশ মায়া, আবেগ।
অন্যদিকে মায়ের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক। কত অল্পতেও মানুষ সুখী হতে পারে—পল্লিকবি তার ভাষায় প্রকাশ করে গেছেন।
লেখক- শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।