শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সকালের খাবারে অনীহা কেন?

আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ০৯:৩১

‘ঘুম থেকে উঠলি? ব্রাশ করে আয় খেতে যাব।’ দুই বন্ধু এভাবেই সকালে ঘুমঘুম অবস্থায় হয়তো একজন আরেক জনকে খেতে যাওয়ার বায়না করে। কিন্তু কখনো সকালের খাবার খেতে যাওয়া হয় না। কিংবা বিস্কুট, কেক বা কলাসহ কিছু নিজেদের সংরক্ষণে থাকলেও অনীহাবশত আর খাওয়া হয় না সেগুলোও। খাওয়া হবেই-বা কী করে? ঘুম থেকে এই উঠবে বলে তো বেজে গেল বেলা ১২টা। এরকমই নিত্যদিন কেটে যাচ্ছে হল বা মেসে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা স্কুলশিক্ষার্থীদের।

দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সকালে নাশতা খাওয়ার চেষ্টা করে কিংবা কোনো কারণে খেতে না পারলেও বাকি মিলগুলো সময়মতো খেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমনটি খুব কমই চোখে পড়ে। এমনটি হওয়ার কারণও যে কারো চোখ এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।


বেশির ভাগ হলের শিক্ষার্থীই রাতভর জেগে থেকে পড়ালেখা করছে, কারণ পরদিন তো সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় বসতে হবে। তারপর কেউ পড়ছে, গেম খেলছে, হঠাত্ রাতে হল থেকে বেরিয়ে পড়ছে অজানার উদ্দেশে। কেউ রাতভর বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে, কোথাও কোথাও গানের আসরও বসিয়েছে। এসব রেখে অনেকেই ঘুমাতে যেতে চাইছে না। রাত হয়েছে তো কী? দিনের বেলা না হয় ঘুমাব, সারা দিন ধরে। এরকম করে রাত পার হয়ে যাওয়ার পর যেই ভোর ৫টা কি ৬টা বেজেছে, তখন শুরু হয়ে গেল রাজ্যের সব কান্না। চারদিক থেকে যে অ্যালার্ম বেজে উঠছে। এখন যে উঠতে হবে। মন বলছে, না আরেকটু ঘুমাই কিংবা চোখ বুজে থাকি। সারা রাতের ক্লান্িত যেন তখনই ভর করে। অনেক কষ্টে ওঠার পর শুরু হলো— বই বা শিট নিয়ে হেফজ পড়া। না, কিছুতেই যে মাথায় ঢুকছে না। থাক, কী আর হবে, যা আসবে কোনোমতে লিখতে পারলেই হবে। এই চিন্তা নিয়ে কেউ সকাল ১০টায় পরীক্ষা দিতে চলে গেছে কোনো ধরনের নাশতা না করেই।


আবার কেউ ক্লাস করতে ৮টায় উঠে চলে গেছে ক্লাস করতে। সবাই খাওয়ার কথা যেন ভুলেই গেছে। আসলে এটা ভুলে যাওয়া নয়, অন্তহীন সীমানা পেরিয়ে চলে গেছে নিরুদ্দেশ।

যা-ই হোক এভাবেই আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের দিন কেটে যাচ্ছে সকালে না খেয়ে কিংবা সারাদিন দুই বেলা খেয়ে। কেউ কেউ কখন খেয়েছে, কিংবা খেয়েছে কি না সেটিও মনে রাখে না। এর ফলে অনেকের স্বাস্থ্যগত দুর্বলতা, শারীরিক নানা জটিলতা ঘটছে। এর সবকিছুর বড় কারণ খাবারে অনিয়ম কিংবা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না খাওয়া। এর জন্য অবশ্য হল কর্তৃপক্ষও নানাভাবে দায়ী। কারণ তারা অনেক সময়ই হলের ডাইনিং বন্ধ রাখে, খাবারের মান কমিয়ে দেয় আবার কখনো খাবারের দাম পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। এগুলোই হলো আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রতিদিনের অবস্থা। তার পরও হলের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকে।

সকল শিক্ষার্থী খাবারে অনীহা না করে বিশেষ করে সকালের খাবার নিয়মিত খেয়ে দিনটা শুরু করবে এই প্রত্যাশা রাখি।

লেখক: শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এসজেড

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন