শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘পছন্দমতো পোশাক’ পরে তরুণী হেনস্থার প্রতিবাদ

আপডেট : ২৭ মে ২০২২, ২০:২১

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণীকে হেনস্থার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ২০ তরুণ-তরুণী। তারা এ প্রতিবাদের নাম দিয়েছেন ‘অহিংস অগ্নিযাত্রা’। ‘পছন্দমতো পোশাক’ পরে স্টেশনটিতে গিয়েছেন তারা।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কিশোরগঞ্জগামী আন্তঃনগর এগারসিন্দুর ট্রেন থেকে তারা নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে এসে নামেন। দলটিতে অন্তত ১৫ জন তরুণীর পরনে ছিল টাইট জিন্স প্যান্ট ও টিশার্ট।

গত ১৮ মে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে একজন তরুণী পোশাকের কারণে হেনস্থার শিকার হন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতেই এই তরুণীরা নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে আসেন।

প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ১৭ তরুণী ও তিনজন তরুণ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। অংশগ্রহণকারীরা অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের নারীবাদী গ্রাসরুটস অরগানাইজিং প্ল্যাটফর্মে যুক্ত। একটি স্টোরিটেলিং প্রকল্প হিসেবে তারা পিতৃতন্ত্রে নারীর আগুনে মোড়ানো পথের গল্পগুলো তুলে আনেন। ঢাকা-নরসিংদী যাত্রা এরই একটা অংশ। এই প্রতিবাদ কর্মসূচির সংগঠক ছিলেন অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি তৃষিয়া নাশতারান।

দলের অন্যরা হলেন সুরভী, এ্যানি, আনোয়ার, অর্ণব, নুভা, মম, অপরাজিতা, সামিহা, সানজানা, স্মিতা, লক্ষ্মী, অন্তরা, মিশু, প্রমি, জিসা, নিশা, বিজু, ইফফাত, নীল। তারা একেকজন নারীবাদী, শিল্পী, সংগঠক, নাট্যকর্মী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, আলোকচিত্রী, গবেষক, উন্নয়নকর্মী ও প্রকৌশলী।

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন থেকে নামার পর তারা অপেক্ষমাণ যাত্রী ও ভ্রাম্যমাণ দোকানীদের সঙ্গে ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। পরে তারা কয়েকটি উপদলে ভাগ হয়ে স্টেশনটির নানা প্রান্তে ঘোরেন। পরে স্টেশন মাস্টার এটিএম মুছার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এর আগে রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ওই দিনের ঘটনা নিয়ে তারা কথা বলেন। 

অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি তৃষিয়া নাশতারান বলেন, ‘আমরা নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন ও এখানকার মানুষদের দেখতে এসেছি। তাদের সঙ্গে আমরা মানবিক যোগাযোগ স্থাপন করতে চেয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, শান্তিপূর্ণভাবে শরীর ও পোশাকের স্বাধীনতার জায়গা রিক্লেইম করা। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মেয়ে নেটওয়ার্কের ফেসবুক পেজে আমরা লাইভে এসে আজকের অভিজ্ঞতা আর পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো।

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার এটিএম মুছা জানান, দলটি ঢাকা থেকে ট্রেনে করে আমাদের স্টেশনে এসে নেমেছেন। তারা স্টেশন ঘুরে দেখেছেন এবং এখানকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমার সঙ্গে তারা বসেছিলেন, জানতে চেয়েছেন ওই দিনের বিস্তারিত। আমিও তাদের ওই ঘটনার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়েছি। তারা তরুণী হেনস্থার প্রতিবাদ জানাতে এসেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।

এর আগে গত ১৮ মে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে আসেন এক তরুণী ও দুই তরুণ। সকাল পৌনে ছয়টার দিকে স্টেশনটির ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তারা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় স্টেশনে মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা কী পোশাক পরেছো তুমি’। তরুণীও পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনার তাতে সমস্যা কী’। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এর মধ্যে সেই বিতর্কে যোগ দেন স্টেশনে অবস্থানরত কয়েকজন ব্যক্তি।

ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছে একদল ব্যক্তি। এর মধ্যেই এক নারী উত্তেজিত অবস্থায় তার সঙ্গে কথা বলছেন। বয়স্ক এক ব্যক্তিও তার পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে ওই নারী দৌড়ে তাকে ধরে ফেলেন। এ সময় অশ্লীল গালিগালাজ করতে করতে তার পোশাক ধরে টান দেন ওই নারী। কোনোরকমে নিজেকে সামলে দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে চলে যান তরুণী।

রেলওয়ে পুলিশ বলছে, সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ২১ মে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত মো. ইসমাইলকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে ভৈরব রেলওয়ে থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরের দিন শনিবার বিকেলে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান এবং এই ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দেন। ওই রাতেই ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করা হয়। মামলায় মো. ইসমাইল ও শিলা আক্তারের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও একজন নারী ও ৮ থেকে ১০ জন পুরুষকে আসামি করা হয়। তবে তরুণীকে গালিগালাজ, মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত ওই নারীকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। 

 

ইত্তেফাক/ইউবি