প্রতি বছর দেশে মানুষ বাড়ছে ২০ লাখেরও বেশি। কৃষিজমি কমছে ৮ লাখ হেক্টর। তারপরও জনপ্রতি সরবরাহ কমছে না কৃষিপণ্যের। বরং তা দিনদিন বাড়ছে। যেখানে কৃষিই আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, সেখানে দেশের অর্থনীতির এই চরম সংকটকালে কৃষি খাতকে অবশ্যই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ সংকটকালীন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একমাত্র কৃষিকে সমৃদ্ধ করেই আমরা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারব। বর্তমানে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সন্েতাষজনক হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এর সুফল সমানভাবে পৌঁছাচ্ছে না। সমাজের বহু মানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। তাছাড়া সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি মানুষের প্রকৃত আয়কে কমিয়ে দিচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চরম আকার ধারণ করছে। মাথাপিছু আয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি ঠিকই, কিন্তু সমাজের আয়বৈষম্য এখন বড় একটি চ্যালেঞ্জ। তাই আসন্ন বাজেটে আয়বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষি খাতে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা, প্রাপ্য মর্যাদা না থাকায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে কৃষি আবাদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্রামের অনেক মানুষ উৎপাদনবিমুখ হচ্ছে। এতে দেশের প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, দেশের প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ না বাড়িয়ে কাগজি মুদ্রা ছাপালে দেশে মূল্যস্ফীতি হবে। তাই কৃষিকাজে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে উৎসাহিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট হবে দেশের ৫১তম বাজেট। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এতে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বাজেট ঘোষণার প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। নতুন বাজেটে জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। তাই আসন্ন বাজেটে কৃষি খাতেই সর্বোচ্চ বরাদ্দ আসা উচিত। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় জিডিপিতে কৃষি খাতে (শস্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও বন উপখাত) অবদানের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। স্বাধীনতার প্রথম দশকে জিডিপির অর্ধেকের বেশি আসত এই খাত থেকে। কারণ তখন অন্যান্য খাত সেভাবে প্রভাবিত ও প্রসারিত হয়নি। বর্তমানে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। জিডিপিতে কৃষি খাতের সরাসরি অবদান কমে গেলেও কৃষি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জীবনীশক্তি। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪২ দশমিক ৬২ শতাংশ কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত। অথচ কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার কমছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার আবার বেড়ে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপর থেকে অনেকটা ধারাবাহিকভাবে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকে। এমতাবস্থায়, আসন্ন বাজেটে কৃষি খাতে ভতুর্কি ও প্রণোদনার পরিমাণ অবশ্যই বাড়াতে হবে। আসলে বেশ কয়েক অর্থবছর ধরে ৯ হাজার কোটি টাকার আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে কৃষি খাতে ভতুর্কির পরিমাণ। এ খাতে ভতুর্কি ও প্রণোদনার বিশেষ সুবিধাগুলো মূলত কৃষক ও এসব সুবিধার বৃদ্ধি তাদের অধিক পরিমাণে কৃষিপণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করে।
বর্তমানে কৃষি মজুরের সংকট যেমন বেড়েছে, তেমনি মূল্যও অনেক বেড়েছে। দেশের অধিকাংশ কৃষকের পক্ষে বাড়তি শ্রমমূল্যে চাষাবাদ করা অলাভজনক হয়ে পড়েছে। তাই কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের কোনো বিকল্প নেই। কৃষি চাষাবাদ, কর্তন, প্রসেস করার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কৃষককে কৃষি ভতুর্কির আওতায় সুযোগ প্রদানের পাশাপাশি সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি কৃষি লোনের ব্যবস্থাও আসন্ন বাজেটে করা জরুরি। ই-কৃষিকেও এগিয়ে নিতে এবং মাঠ পর্যায়ে জনবল বাড়াতে বাজেট বাড়ানো দরকার।
লেখক: শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর