তালায় পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েকটি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার মানুষ সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে। পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। তালা উপজেলার খলিষখালী, জালালপুর, নগরঘাটা ইউনিয়ন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি, বল্লী ইউনিয়ন এবং সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩৩টি গ্রামের শত শত পরিবার এখনো নিরাপদ পানির সমস্যার মধ্যে আছেন।
বলাডাংগা গ্রামের শরবানু বেগম, ওয়ারিয়ার রুপালী বেগম, বকচরা গ্রামের শহিদুল্লাহ সরদার, ফজিলা খাতুন, মুকুন্দপুর গ্রামের হোসনেয়ারা বেগম, সাবিনা খাতুন, সাতক্ষীরা পৌরসভার কাটিয়া উত্তরপাড়ার বেবী খাতুন, বদ্দিপুর কলোনির হোসনেয়ারা আক্তার ময়নাসহ অনেকেই বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি, স্বাস্হ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও হাইজিন সমস্যার কথা তুলে ধরে জানান, তাদের এলাকা বৃষ্টির সময় সাত থেকে আট মাস জলাবদ্ধ থাকে এবং লবণাক্ত থাকায় খাওয়ার পানির কোনো ব্যবস্হা নেই। প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক কলস খাবার পানি আনতে হয়। আবার এক ড্রাম পানি ৩০ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া লাগে।
বর্ষা মৌসুমে ভিটেবাড়িতে পানি জমে থাকায় ল্যাট্রিন করার মতো জায়গাও থাকে না। আর লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, চুলকানি, পাঁচড়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তারা। তারা আরো বলেন, বেতনা নদী ভরাট হওয়ায় এবং এলাকায় শত শত মাছের ঘেরের কারণে পানি সঠিক পথে নিষ্কাশন হতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
উত্তরণ-এর ওয়াই ওয়াশ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী হাসিনা পারভীন জানান, এলাকার মানুষের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্হা উন্নয়নের জন্য আরো বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি এসডিজির ৬ নম্বর গোল অর্জনের জন্য সরকারি পদক্ষেপ জরুরি।
তিনি বলেন, একটি গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা যায় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ৭৯ শতাংশ নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে, যা স্বাস্হে্যর পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। এছাড়া পদ্মা প্রবাহ থেকে এলাকার বিচ্ছিন্নতা ও ব্যাপকভাবে নোনা পানির চিংড়ি চাষের কারণে এলাকায় লবণাক্ততার তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, খাওয়ার পানির সংকটের সুযোগ নিয়ে অসংখ্য ব্যবসায়ী পানি বিক্রির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের ব্যবহূত প্রযুক্তি অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ সম্মত নয়। তাছাড়া দরিদ্র মানুষের পক্ষে বাজারজাত উচ্চ মূল্যের এসব পানি কিনে খাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। যার ফলে তারা অনিরাপদ পানি পান করে থাকেন।
এ ব্যাপারে ঝাউডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজমল উদ্দীন জানান, এলাকায় খাওয়ার পানির সমস্যা প্রকট। খাবার পানি ও স্বাস্হ্য সম্মত ল্যাট্রিনের ব্যবস্হা করতে সরকারি-বেসরকারি সংস্হার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জনস্বাস্হ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান জানান, বল্লী, ঝাউডাঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকায় লেয়ার না পাওয়ায় ডিপ-টিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয়ে উঠছে না। তবে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্হা আগের চেয়ে বর্তমানে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। খোলা স্হানে মল ত্যাগের হারও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, সুপেয় পানির জন্য দুটি পাওয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না।