শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সরকারি স্বীকৃতির পর প্রাণবন্ত গুলিয়াখালী সি-বিচ

আপডেট : ১০ জুন ২০২২, ১৩:৩৮

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। বিস্তীর্ণ সৈকতে সবুজ ঘাসের গালিচা দূর থেকে হাতছানি দেয়। সবুজ ঘাসের এমন সমুদ্র সৈকত বিশ্বজুড়ে মেলা দুষ্কর। সেই সবুজ গালিচার মাঝে বয়ে চলেছে আঁকাবাঁকা নালা, ছোট ছোট গর্ত। একদিকে দিগন্তজোড়া জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন। সেখানে কিছু শ্বাসমূলী উদ্ভিদরাজিও রয়েছে। বনের গাছের ছায়ায় বসে সমুদ্রের বুকে সূর্য ডোবার দৃশ্য এবং দূর থেকে বয়ে আসা ঝিরিঝিরি কোমল বাতাস ভ্রমণপিপাসুদের প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। 

বাংলাদেশে সমুদ্র সৈকত বলতে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা কিংবা পতেঙ্গায় বালুচরের যে দৃশ্য চোখে ভাসে গুলিয়াখালী সে হিসেবে ব্যতিক্রম। পাখি, ঢেউ, সবুজ আর বাতাসের মিতালির অনন্য সহাবস্থান দেখা যায় এ সৈকতে। সমুদ্র তীরকে সাজাতে কোন ধরনের কার্পণ্য করেনি নিয়তির প্রকৃতি। সবকিছু মিলে এ যেন প্রকৃতির এক অন্যরকম ‘আশীর্বাদ’। এখানে দেখা মিলে সোয়াম্প ফরেস্ট আর ম্যানগ্রোভ বনের মিলিত রূপ।

সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার পর নিরিবিলি এই সৈকতে এখন হাজারো প্রাণের কোলাহল। সম্প্রতি এখানে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে। এদিকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু করে হোটেল-মোটেল গড়ে তোলার জন্য গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হোটেল-মোটেল জোন করতে জায়গা অধিগ্রহণ ও খাস জায়গা সনাক্তের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। 


সৈকতটির সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া বেশিদিন হয়নি। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে গত ১০ জানুয়ারি পর্যটন  এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ওই সময় প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ বা অন্য কোনরূপ কার্যক্রম গ্রহণের কারণে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত এলাকার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ২৫৯.১০ একর এলাকায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে বা ভবিষ্যতে আরও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প ও সেবা খাতের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে এবং পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকায় অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ বা অন্য কোনরূপ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকল্পে বাংলাদেশ পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ও বিশেষ পর্যটন অঞ্চল আইন, ২০১০ এর (৪) ধারার ক্ষমতাবলে এই এলাকা পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হলো।

এদিকে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ওই সমুদ্র সৈকতকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কর্তৃপক্ষের ধারণা, সরকারি পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় গুলিয়াখালী সৈকত হবে দেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থান।  

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পর্যটন কর্পোরশন গুলিয়াখালী সি-বীচকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করে।

গুলিয়াখালী বিচ সরকারি ব্যবস্থাপনায় পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বেকার সমস্যা দূর হয়ে ওই এলাকা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবে এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা। স্থানীয়রা জানায়, গুলিয়াখালী সি-বিচটি পর্যটন শিল্প হিসাবে পুরোদমে রূপ নিলে এখানে স্থানীয়ভাবে প্রায় লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে পর্যটন কেন্দ্রে রূপ দিতে নানা ধরনের অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য নানান পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের চাপ কমাতে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে সরকার।’ 

যেভাবে যাওয়া যায়
গুলিয়াখালী সি-বিচটি সীতাকুণ্ড বাজার থেকে দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। পৌরসদর নামার বাজার থেকে সিএনজিতে যাতায়াত ভাড়া জন প্রতি ২০ টাকা করে। 

 

ইত্তেফাক/এসজেড