শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বর্ষার শুরুতেই দাপট বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু

আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ০৮:১৫

বর্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে রাজধানীতে। গত ৯ জুন থেকে ১৪ জুন মোট ছয় দিনে ১২৮জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১১ জন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনজন। এ ছাড়া স্কয়ার হাসপাতালে এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালে একজন করে রোগী ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার বাইরে নড়াইলে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বর্তমানে সারাদেশে সর্বমোট ৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭২ জন ও ঢাকার বাইরে তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।     

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৬০৭ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৩২ জন রোগী। তবে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখনও কেউ মারা যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর মৌসুম-পূর্ববর্তী এডিস মশার জরিপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এই মশার ঘনত্ব অনেক বেশি। তাই এ বছর এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাছাড়া এরই মধ্যে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল এবং এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রাক্তন ডিপিএম ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য মতে, মৌসুমের আগেই বহু স্থানে এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে। যে মাত্রায় এটা বাড়ছে, সেটা অস্বাভাবিক। এই জরিপ থেকে এটাই প্রতীয়ামন হয় যে, মৌসুম যখন শুরু হবে, তখন এটা আরও বিস্তৃতি লাভ করবে। তিনি বলেন, পানি যাতে জমে না থাকে; বিশেষ করে পড়ে থাকা ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার, পানির বোতল, ফুলের টব, ট্রে, মাটির পাত্র ইত্যাদি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিলো। সেই বছর এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। যাদের মধ্যে মারা যান ১৪৮ জন। করোনা মহামারির মধ্যে গত ২০২০ সালে ডেঙ্গু তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গু কিছুটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

২০১৪ সাল থেকে তিনি ডেঙ্গি প্রতিরোধ, প্রজনন ধ্বংস, বিস্তার রোধ নিয়ে গবেষণা করছেন। জরিপে উঠে আসে, ২০২০ ও ২১-এর চেয়ে ২০২২-এ বৃষ্টিপূর্ব এডিসের ঘনত্ব বহুগুণ বেশি। এ জরিপ সিটি করপোরেশনে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে এডিস মশার ঘনত্ব দিয়ে ডেঙ্গির প্রকৃত রূপ নিশ্চিত করা যায় না। অর্থাৎ ৯৫ শতাংশই নিশ্চিত করা যায় না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ববিদ ও ফ্যাকাল্টি মেম্বার ড. জি এম সাইফুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশের প্রাথমিক সীমাবদ্ধতা হলো, কিউলেক্স মশার লার্ভা নিধনের জন্য নগরকর্তাদের হাতে কোনো না কোনো কীটনাশক থাকলেও এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে আপাতত উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো সমাধান নেই। নোভালিউরন নামে মশার অপরিণত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার যে দাওয়া দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অশেষ প্রচেষ্টায় রেজিস্ট্রেশন করা আছে, তার সরবরাহ খুবই অপ্রতুল এবং তার প্রয়োগও আমাদের পরিবেশে প্রচলিত নেই বললেই চলে। অতএব বিশেষজ্ঞ পরামর্শ হলো, জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ করে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করুন।

এদিকে সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশা নিধনে অভিযান করেছে সেময়  রাজধানীর বাসাবাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে মশার লার্ভা থাকায় মামলা  ও আর্থিক দণ্ড প্রদান করা হয়।

ইত্তেফাক/ ইআ