বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: আবাসিক ভবনে থাকেন না উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ হল প্রাধ্যক্ষরা!

আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২২, ০১:৩৮

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারসহ অন্তত ১০টি হলের প্রাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে থাকেন না। ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমে ধীরগতির অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া হলের নানা সংকট সমাধান না হওয়ার পেছনে প্রাধ্যক্ষদের বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকাকে দায়ী করছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে কোয়ার্টারগুলো ফাঁকা পড়ে থাকলেও গার্ড ও মালিসহ অন্য কর্মচারীরা কাজ করছেন। এতে কোয়ার্টার সংরক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বাসভবন ছেড়েছেন। তবে এখনো উপাচার্যের বাসভবনে উঠেননি বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। তিনি সাভারের সেনওয়ালিয়ায় নিজের বাড়িতে বসবাস করেন। এর আগে, উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) দায়িত্বে থাকাকালীন অধ্যাপক মো. নূরুল আলম এক দিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত বাসভবনে ছিলেন না।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে থাকেন না। তিনি ধানমন্ডি-৪ এ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তবে যাতায়াতের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হকও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত বাসভবনে উঠেননি। তিনি আগে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করার সুবাদে এখনো কোষাধ্যক্ষের বাসভবনেই বসবাস করছেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৬টি আবাসিক হলের মধ্যে বেগম সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মওলানা ভাসানী হল, শহীদ সালাম-বরকত হল, আল-বেরুনী হল, মীর মশাররফ হোসেন হল ও আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ কোয়ার্টার রয়েছে। এর মধ্যে বেগম সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ, মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েম, শহীদ সালাম বরকত হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু, মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ওবায়দুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত আবাসিক ভবনে থাকেন না।

অন্যদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল, প্রীতিলতা হল, শেখ হাসিনা হল, বেগম খালেদা জিয়া হল, জাহানারা ইমাম হল, ফজিলাতুন্নেসা হল ও শহিদ রফিক জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ কোয়ার্টার নেই। তাদের মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল্লাহ হেল কাফী, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহিদ হক ও প্রীতিলতা হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক আয়শা সিদ্দিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে থাকেন না। তাদের মধ্যে অধ্যাপক মো. আবদুল্লাহ হেল কাফী, অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক নাহিদ হক ও সহযোগী অধ্যাপক আয়শা সিদ্দিকা অরুণাপল্লী কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটিতে এবং সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা সাভারের পুলিশ হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে থাকেন না জেনেও একাধিক শিক্ষককে হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে নিয়োগপত্রে বাধ্যতামূলক বলা থাকলেও উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রাধ্যক্ষরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে না থাকা দুঃখজনক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল্লাহ হেল কাফী বলেন, যাদের কাজের আগ্রহ আছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে থাকলেও কাজ করেন, না থাকলেও কাজ করেন। তবে যেসব হলের প্রাধ্যক্ষদের জন্য নির্ধারিত কোয়ার্টার আছে, সেসব হলের প্রাধ্যক্ষদের কোয়ার্টারে থাকা উচিত।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

ইত্তেফাক/ইআ