তরুণ প্রজন্মকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে ভালোবেসে তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, স্থপতি ও নগরবিদরা। তারা বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আছে অনেক না পাওয়ার গল্প। এরপরও আজ আমাদের দেশকে কেউ অবজ্ঞা করতে পারে না। আজ গর্ব করার মতো পদ্মা সেতুসহ অনেক সাফল্য আছে। আর আগামী দিনে এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এগিয়ে আসবে তরুণ প্রজন্ম।’
সোমবার (৪ জুলাই) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় দিনব্যাপী আয়োজিত ‘লিডারস সামিট’ শীর্ষক কর্মশালা ও আলোচনা সভায় তারা এই আহ্বান জানান।
দৈনিক ইত্তেফাক ও নিউজপেপার অলিম্পিয়াড আয়োজিত এই সামিটে অংশ নেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২১০টি ক্যাম্পাসভিত্তিক সংগঠন ও ক্লাবের নেতৃত্বে থাকা প্রতিনিধিরা। আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল দ্য আর্থ। তরুণ প্রজন্মের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশের লক্ষ্যে দৈনিক ইত্তেফাক এই আয়োজনটির উদ্যোগ নেয়।
সামিটে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, সামাজিক উদ্যোক্তা হতে চাইলে করণীয়, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবনী চিন্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্যানেল ডিসকাশন সেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচক হিসেবে অংশ নেয় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল একদল তরুণ।
বিকেলে লিডার্স সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। এতে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন তরুণ রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, দ্য ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকার অধ্যাপক স্থপতি ও নগরবিদ ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও গণিতবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. ডেভিড ডোল্যান্ড।
সভাপতির বক্তব্যে তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘আমরা যত দেশেই যাই, দিন শেষে মনে হয়, আমার দেশ সত্যি সোনার বাংলা। এখানে ফিরে আসতেই হবে।’
তরুণ প্রজন্মকে নিজের সংস্কৃতিকে ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে ১৫ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার পেছনে প্রযুক্তির ভূমিকা রয়েছে। প্রযুক্তির জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তরুণরা নিজেদের শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে তুলবে। একইসঙ্গে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।’
বিশেষ অতিথি নাহিম রাজ্জাক এমপি বলেন, ‘নেতৃত্বের জন্য আমাদের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে হবে। এখন অনেক তরুণ রাজনীতিবিদ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ভালো করছেন, এতে করে বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।’
তিনি ৭ই মার্চ ঐতিহ্য-এর নিমিত্তে 'জয় বাংলা' কনসার্টের আয়োজনের কথা জানিয়ে বলেন, তরুণদের বাংলাদেশের জন্মের সঠিক ইতিহাস ধারণ করে গণমানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ বলেন, ‘কাজ করার অনেক জায়গা আছে। আমাদের ঢাকাকেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। বিভিন্ন জেলায় সেবা ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে যানজট কমবে। আমাদের অনেক সময় যানজটের কারণে নষ্ট হয়ে যায়।’
ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘প্রতিবছর এসএসসিতে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের অভিভাবকরা স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না। তাই ভালো ফলের চেয়ে সঠিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমস্যা সমাধানে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ হয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।’
সমাপনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইত্তেফাক অনলাইনের সহসম্পাদক সৈয়দ তাওসিফ মোনাওয়ার। দিনের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নিউজপেপার অলিম্পিয়াডের প্রেসিডেন্ট লাব্বী আহসান। এরপর বিভিন্ন পর্ব পরিচালনা করেন শাহরিয়ার রিমেন, তাসপিয়া ইসলাম, আয়মান সাবিত ও মুমতাহিনা মৌমিতা।
দিনের প্রথমভাগের প্যানেল ডিসকাশনের বিষয় ছিল ‘টেকনোলজি ফর কোয়ালিটি এডুকেশন’। এতে বক্তব্য দেন বুয়েটের শিক্ষক ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মো. এনায়েত চৌধুরী, অনলাইন সহপাঠীর প্রধান নির্বাহী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা সাদমান মজিদ এবং অনলাইন এডুকেটর সাদমান সাদিক।
দ্বিতীয় সেশনে ‘এন্ট্রাপ্রেনারশিপ অ্যান্ড ইনোভেশন’ নিয়ে আলোচনা করেন এটিএসি অস্ট্রেলিয়া ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর শুভাশিস ভৌমিক, মশাল মেন্টাল হেলথ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া মুমু, কার্টুনিস্ট ও উন্মাদ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক মোর্শেদ মিশু ও ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত উদ্যোক্তা সাগর মজুমদার।
তৃতীয় সেশনের বিষয় ছিল ‘ইয়ুথ অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া’। এতে অংশ নেন টেন মিনিট স্কুলের ব্র্যান্ডিং টিম লিড রাফসান সাবাব, জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর শিহাব হাসান নিওন, রাকিন আবসার ও নিউজিল্যান্ডের যুব মন্ত্রণালয় থেকে ইয়ুথ চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত আতিয়া ইরফান প্রিয়ন্তী।
লিডার্স সামিট আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল এডবিলিভ, পাক্ষিক অনন্যা ও অনন্যা ১৮ প্রভা, কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ক্রুজ শিপ এমভি বে ওয়ান, রাফিজা'স ক্লোজেট, ড্যাজেল ব্লু ফ্যাশন, ইনফ্লুয়েন্সার হাব ও দাঁড়িকমা প্রকাশনী।
শিশুকিশোর ও তরুণদের মাঝে নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠের অভ্যাস বাড়াতে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে নিউজপেপার অলিম্পিয়াড। 'দেশসেরা পত্রিকা বিশারদ' খুঁজতে ভিন্ন আঙ্গিকের প্রতিযোগিতা আয়োজন করে সংগঠনটি।