ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে আচ্ছন্ন পরিবার ও এলাকাবাসী। শোকাহত পরিবারে এখনো কান্না থামেনি। তবে বেঁচে যাওয়া শিশুটিকে নিয়ে নিজেদের কাছে রেখে বড় করতে চান প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ দাদা-দাদি।
শনিবার রাতে জানাজা শেষে ত্রিশাল উপজেলার রায়মণি গ্রামের ফকির বাড়িতে একসঙ্গে তিনটি কবর দেওয়া হয়েছে। কবরে শায়িত আছেন দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী রত্না ও মেয়ে সানজিদা। একসঙ্গে তিনজনকে হারিয়ে কবরের পাশে বসে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন জাহাঙ্গীরের মা সুফিয়া আক্তারসহ স্বজনরা।
জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ও মা সুফিয়া আক্তার দুইজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারা জানান, জায়গা না থাকায় বাড়ির উঠানেই বানিয়েছেন কবরস্থান। দরিদ্র পরিবারে মোস্তাফিজই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
এদিকে শোকে স্তব্ধ বাড়িতে আলোচনায় এখন বেঁচে যাওয়া নবজাতক। ট্রাকচাপায় মায়ের গর্ভ ফেটে জন্ম নেওয়া শিশুকন্যাকে এক নজর দেখতে ব্যাকুল সবাই।
নবজাতকের বড় বোন জান্নাত আক্তার (১০) বলেন, মোবাইলে আমার বোনের ছবি দেখেছি। আমরা তার জন্য অপেক্ষা করছি। দাদা-দাদি ও আমি তাকে লালন পালন করবো। এভাবে কথা বলতে বলতেই চোখ বেয়ে পানি পরছিল তার।
জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অন্য কোন জায়গা না থাকায় ঘরের সামনেই কবর দিতে হয়েছে তাদের। জাহাঙ্গীর আকিজ গ্রুপের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। অভাব অনটনে চলতো তার সংসার। জাহাঙ্গীর মারা যাওয়ার পর তার নবজাতক সন্তান ছাড়াও আরও দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। শিশুটিকে তারা নিজেরাই লালন পালন করবেন।
শনিবার বিকেল আড়াইটার দিকে ত্রিশালের কোর্ট ভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান জাহাঙ্গীর আলম (৪০), তার ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্মা বেগম (৩২) ও তাদের শিশু সানজিদা। এ সময় মায়ের পেট ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় কন্যাসন্তান। পরে স্থানীয়রা নবজাতকটিকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নবজাতকটিকে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক্সরে রিপোর্টে জানা যায় তার ডান হাতের দুইটি হাড় ভেঙে গেছে। বর্তমানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নগরীর লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, শিশুটির সামগ্রিক অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। সে ভালো আছে এবং আশঙ্কামুক্ত। যেহেতু তার মা নেই, সেহেতু তাকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। আশা করছি তার কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুলহকসহ অনেককেই ওই শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জেলা প্রশাসক জানান, শিশুটির ভোরণ-পোষণ ও ভবিষ্যতের দায়িত্ব জেলা প্রশাসন বহন করবে।