শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাহাড় ও সমুদ্রসম্পদের সদ্ব্যবহার জরুরি

আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২২, ০৫:০৫

আয়তনে ছোট হলেও পুরো বাংলাদেশই সম্পদে পূর্ণ—যেটা খুব কম দেশেই দেখা যায়। দুঃখজনকভাবে পার্বত্য এলাকার অর্থনৈতিক সম্পদ ও সম্ভাবনার খুব কম অংশই ব্যবহার করা হচ্ছে। অতীতে আদিবাসীদের প্রধান পেশা ছিল জুম চাষ। গত ১৫ বছর ধরে তারা ফল চাষের দিকে বেশ আগ্রহী হয়েছে। কিন্তু অল্প পরিমাণে বাগান ছাড়া অধিকাংশ পাহাড় আগাছা জাতীয় উদ্ভিদে পূর্ণ। অথচ এগুলিতে সেগুন, মেহগনি, চন্দন এবং আগর, তেজপাতা, কাজু বাদাম গাছ লাগানো যায়। এসব গাছ রোপণের ফলে বারবার পাহাড়ের মাটি পোড়াতে হবে না এবং পরিকল্পিতভাবে রোপণ করা হলে জুম চাষের চেয়ে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব।

১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পর্যটন ছাড়া এখানে আর কোনো শিল্পের বিকাশ ঘটেনি। এই এলাকায় একমাত্র চন্দ্রঘোনা কাগজ কল ছাড়া আর বড় শিল্প কারখানাও গড়ে ওঠেনি। অথচ পার্বত্য এলাকার পাহাড়ের বাঁশ-কাঠ ব্যবহার করে এখানে আরো কয়েকটা কাগজের কল প্রতিষ্ঠা করা যেত, যার ফলে দেশে কাগজের দামও কমত। এছাড়াও এই এলাকায় ফল, আসবাবপত্র ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কাপ্তাই হ্রদের তীরে নৌযান এবং এর যন্ত্রাংশ উত্পাদন কারখানা প্রতিষ্ঠা করা যায়। পর্যটন যে কীভাবে একটা দরিদ্র এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রই তার প্রমাণ। এসব জেলায় একাধিক পর্যটনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দরিদ্র আদিবাসীদের অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নির্মিত প্রায় ২০০০ ফুট পাহাড়ের ওপর সাজেক পর্যটনকেন্দ্র পরিণত হয়েছে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে। এমনকি আরো প্রায় ১০০ ফুট উঁচু কংলাক পাহাড়ের ওপরও পর্যটকদের থাকা ও খাওয়ার জন্য অঅদিবাসীরা হোটেল-রেস্টুরেন্ট বানিয়েছে। সারা বছর সেখানে ভিড় থাকে।

নদী, পাহাড়, বন ও হ্রদ বেষ্টিত কাপ্তাই পার্বত্য অঞ্চল আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হলেও সেখানে বেসরকারি হোটেল আছে মাত্র একটা। সরকারি সংস্থাগুলোরও আবাসন ভাড়া অত্যন্ত বেশি। এখানে আরো হোটেল প্রয়োজন। বাংলাদেশে নদী বা সমুদ্রে সাঁতার কাটার জন্য একটা জায়গাও নাই। এখানকার শান্ত কর্ণফুলি নদীতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে পর্যটকদের সাঁতারের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। আদিবাসী জনগণের দরিদ্রতার সুযোগে সন্ত্রাসী একটা গোষ্ঠী এদের বিপথগামী করে চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত করছে। এখানে বসবাসকারী সব পাহাড়ি ও বাঙালি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেই বাধ্যতামূলকভাবে চাঁদা দিতে হয় বলে ইত্তেফাকে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে এবং আমি একাধিকবার সেখানে গিয়েও এর সত্যতা জানতে পেরেছি। পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষি, পর্যটন এবং শিল্প-কারখানার স্থাপন করে সেগুলিতে আদিবাসীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে এখানকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বাংলাদেশের অন্যতম সম্পদ সমুদ্র। কক্সবাজার সৈকতের বালুতে ইলমেনাইট, জিরকন, রুটিল, ম্যাগনেটাইট, লিউকক্সিন, কিয়ানাইট, গারনেট এবং মোনাজাইট-এর মতো অনেক মূল্যবান খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেলেও ১৯৮০ সাল থেকে ‘সৈকত খনিজ বালি আহরণ কেন্দ্র’ নামফলক স্থাপন ছাড়া এক্ষেত্রে আর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। অবহেলার কারণে সৈকতের খনিজের ওপর নির্মিত হচ্ছে বড় বড় হোটেল!

২০১২ থেকে ১৪ সালে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বিশাল এক সমুদ্রসীমার অধিকারী হয়েছে, যেখানে তেল-গ্যাসসহ বহু মূল্যবান সমুদ্র সম্পদ আছে। কিন্তু এসব সম্পদ উত্তোলনে কোনো উদ্যোগ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিষয়টি সম্পর্কে সরকারির উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তায় গত ৫৩ বছর ধরে অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর এ খনিজ সম্পদগুলো নষ্ট হচ্ছে এবং সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে। এমনকি এই সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের জেলেদের মাছ ধরার কার্যক্রমও খুব কম। এই সুযোগে বিদেশি জেলেরা মাছ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে! দেশের বাজারেও সামুদ্রিক মাছের দাম খুব বেশি। অথচ আধুনিক নৌযান ও সরঞ্জামের সাহাঘ্যে বেশি সংখ্যক জেলেকে নিজেদের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত করা হলে অনেকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হতো, বাড়ত রপ্তানি আয়ও।

—ঢাকা

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন